গাজীপুর: গাড়িতে ছোড়া পেট্রোলবোমা থেকে রক্ষা করবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তরুণ বিজ্ঞানী ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বারি চত্বরে ইয়ামিন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রদর্শনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বারি’র কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় পরিবহন নেতা এবং কয়েক শ’ চালক ও শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
খোলা মাঠে থাকা একটি জিপে তিনি নিজে পেট্রোলবোমা ছুড়ে তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে বোমা রক্ষা পাওয়ার বিষয়টি প্রদর্শন করে দেখান।
এ পদ্ধতিতে বারি’র একটি জিপের জানালার কাচের দু’পাশে মোড়ানো হয় স্কচটেপ। জানালার কাচের ভেতরের দিকে দেওয়া হয় তার উদ্ভাবিত বিশেষ মিশ্রণযুক্ত কাপড়ের পর্দা।
এরপর ইয়ামিন উপস্থিত লোকজনের সামনে ওই গাড়িতে ছুড়ে মারেন পেট্রোলবোমা। বোমার আঘাতে গাড়ির কাচ ভেঙে গেলেও তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যায়নি। কাচ ছিদ্র হয়ে বোমার কিছু আগুন ভেতরে যায় এবং ওই পর্দায় জ্বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা নিভে যায়।
জীবন রক্ষাকারী এ প্রযুক্তি সম্পর্কে ইয়ামিন বলেন, পেট্রোলবোমার আগুন থেকে জীবন ও পরিবহন সুরক্ষিত রাখার কোনো সহজ ও কম মূল্যের প্রযুক্তি দেশে বর্তমানে নেই। এ চিন্তা থেকেই সাধারণের জীবন রক্ষায় এই সহজ কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি।
একটি বড় বাসে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
ইয়ামিন আরও জানান, যানবাহনের জানালার কাচের দু’পাশ তিন ইঞ্চি চওড়া স্বচ্ছ স্কচটেপ দিয়ে লেমিনেশন করে নিতে হবে, যা পেট্রোলবোমার আঘাতে জানালার কাঁচ ভাঙা ঠেকাবে এবং ভাঙলেও কাঁচের টুকরা ভেতরে ছিটকে পড়া রোধ করবে।
এটি পেট্রোল ও আগুন ছড়িয়ে পড়াও রোধ করবে। এর ব্যবহারে পেট্রোলবোমার ক্ষতি ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব বলে ইয়ামিন জানান।
দ্বিতীয় পর্যায়ে জানালার ভেতরে বিশেষ পর্দা ব্যবহার করা হয়। হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে চক পাউডার ও আঠা কিনে নিয়ে পানি মিশিয়ে কাই তৈরি করতে হবে। এরপর হার্ডওয়ারের দোকানে কাঠে বার্নিশ করার জন্য যে পাতলা জালি কাপড় পাওয়া যায় তার ওপর ওই কাইয়ের প্রলেপ দিতে হবে।
পরে রোদে শুকিয়ে কাইয়ের প্রলেপযুক্ত কাপড় পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে গাড়ির জানালার ভেতরে। কাইয়ের মিশ্রণটি তৈরি করতে এক কেজি চক পাউডারের সঙ্গে এক লিটার পানি ও ২৫০ গ্রাম আঠা বা গাম প্রয়োজন হবে। আর পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হলে ওই অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রণটি তৈরি করে নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, বিশেষ পর্দাটি অতি উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় নিক্ষিপ্ত পেট্রোলবোমার পেট্রোল বা অকটেন দ্রুত শুষে নেবে এবং এতে তেল
কম ছড়িয়ে পড়বে। বোমার কিছু অংশ বাসের জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে ঢুকলেও তা পর্দায় বাধা পাবে।
ইয়ামিন জানান, চক পাউডার (কার্বনেট) আগুনে কিছুক্ষণ জ্বলে সাময়িক কার্বন-মনো-অক্সাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। এ বিশেষ পর্দাটি দাহ্য নয় এবং অন্যকে জ্বলতেও বাধা দেয়।
এ সময় বারির মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মণ্ডল, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন, গাজীপুর ডিজিএফআই’র উপ-পরিচালক মো. মাহবুব রেজা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম, জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহফুজুর রহমান, গাজীপুর জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকারসহ কয়েকশ’ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞানী ইয়ামিন উপস্থিত কর্মকর্তা, পরিবহন শ্রমিক ও নেতাদের কাছে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক ও প্রয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বর্তমান নাশকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার ক্ষেত্রে একজন কৃষিবিজ্ঞানী তার ধারাবাহিক কাজের
বাইরে গিয়ে এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্রশংসাযোগ্য। এটি আরো প্রচার করা যেতে পারে। প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে সজাগ করা যেতে পারে জনগণ ও পরিবহন সেক্টরের লোকজনকে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।
গাজীপুর জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার বলেন, ইয়ামিনের পেট্রোলবোমা থেকে রক্ষার প্রযুক্তি নিজের চোখে দেখলাম।
পরিবহনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রেট্রোল বোমার আগুনের ভয়াবহতা থেকে অল্প খরচে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। কারণ এ
প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বোমার আগুন দ্রুত ছড়ায় না। আমরা গাড়িতে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করব।
এর আগে ইয়ামিন সমুদ্র বা নদীতে ছড়িয়ে পড়া অনাকাঙ্ক্ষিত তেল শোষণের প্রযুক্তি, পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নৌকা বা অন্য কোনো বস্তুর অবস্থান
নির্ণয়ের প্রযুক্তি, মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়ের প্রযুক্তি, এক টাকায় ফরমালিন পরীক্ষার প্রযুক্তি ও শাক-সব্জি ও ফল-মূল টাটকা রাখার মাটির ফ্রিজ উদ্ভাবন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫