ঢাকা: বিরতিহীন হরতাল-অবরোধের মধ্যেও অবিরামভাবে চলছে আলোচিত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শুরু হওয়া বৃহত্তর এ মামলার শুনানির ২১ কাযদিবস পার করেছে।
দ্রুত গতিতেই চলছে এ মামলার শুনানি, এ কথা জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা করছেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাইকোর্টে এ মামলার নিষ্পত্তি হবে।
তবে এই সময়কে অনুমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব নির্ভর করে বিচারপতিদের উপর।
হাইকোর্টের রায়ের পরে মামলাটি আবার আপিল বিভাগে যাবে। তারপর আপিল বিভাগ বিস্তারিত শুনবেন। সেখানে রায় কার্যকর করতে কত দিন লাগবে, সেটা বলা কঠিন, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তবে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা মনে করছেন, মামলার নথি বেশি হওয়ায় হাইকোর্টে মামলা শেষ করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগতে পারে।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের বিশেষ বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে সংঘটিত ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন তাদের আইনজীবীরা।
গত ৪ জানুয়ারি রাতে সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন।
প্রথমবারের মতো এ বেঞ্চ বসে ৫ জানুয়ারি। ওইদিন এ মামলার বিরতহীন শুনানির জন্য ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করে দেন বিশেষ বেঞ্চ।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে মোট সাজাপ্রাপ্ত ৫৭৫ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন তৎকালীন ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জন বিডিআর সদস্য। তাদের মধ্যে ১৪ জন পলাতক রয়েছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে একটি মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামির ফাঁসির আদেশের রেকর্ড গড়েছে এ রায়টি।
এছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৯ জন পলাতক ও কারাগারে আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন।
সব মিলিয়ে পলাতক রয়েছেন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৩ আসামি।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বর্তমানে বিজিবি, তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করেন বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।
ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। বিচারিক কাজ শেষে হত্যা মামলার রায় দেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত। বিষ্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একই আদালতে চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫