ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যাচার, বুয়েট রিপোর্ট ধামাচাপার চেষ্টা তাকসিমের

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫
প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যাচার, বুয়েট রিপোর্ট ধামাচাপার চেষ্টা তাকসিমের তাকসিম এ খান

ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান এবার নিজের একচেটিয়া দাপট দেখাতে, আর মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতে বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। কুড়িল-পূর্বাচল সংযোগ সড়কের পাশে খাল খনন নিয়ে বুয়েটের প্রতিবেদন ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন।

তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও মিথ্যাচার করেছেন।

জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৩০০ ফুট প্রশস্ত কুড়িল-পূর্বাচল সংযোগ সড়ক নিয়ে এবার বড় রকমের মিথ্যাচারে মেতেছেন তাকসিম। রাজউকের ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) ওই সংযোগ সড়কের কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ৫.৮ কিলোমিটার অংশের উভয় পাশে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী প্রস্তাবিত খালের প্রস্থ যা-ই ড্যাপে উল্লেখ থাকুক না কেন, বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত গবেষণার মাধ্যমে খালের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্থ নিরূপণ করা আবশ্যক।

বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি কুড়িল-পূর্বাচল সংযোগ সড়কের উত্তর দিকসংলগ্ন অংশে অবস্থিত। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম) কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সংযোগ সড়কের উত্তর পাশে ১০০ ফুট খালের প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে অনেক কম প্রস্থের খাল দিয়েই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সম্ভব। পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির রিপোর্ট প্রকাশের আগে তাকসিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু মিথ্যাচার করেন। কুড়িল-পূর্বাচল সংযোগ সড়ক করার সময় রাজউক অনেক খাল ভরাট করেছে এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সংযোগ সড়কের উভয় পাশে ১০০ ফুট করে খাল খননের কথা বলেছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার অতীতের সব জরিপ ও ম্যাপ (সিএস, আরএস) থেকে দেখা যায়, সংযোগ সড়ক এবং এর উভয় পাশে ১০০ ফুট বরাবর কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত কোনো খাল ছিল না। সুতরাং রাজউক বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভরাট করার প্রশ্নই আসে না।

আইডাব্লিউএমের পুলিশ হাউজিংয়ের গবেষণালব্ধ রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সংযোগ সড়কের উভয় পাশে ১০০ ফুট খালের পরিবর্তে অনেক কম প্রস্থের খাল দিয়েই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সম্ভব। অথচ তাকসিম সব সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বলে আসছেন, ১০০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট খাল ছাড়া কোনোক্রমেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়। এবার কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে তাকসিম একটি পত্রের মাধ্যমে আইডাব্লিউএমকে তাদের পুলিশ হাউজিং রিপোর্টটি প্রত্যাহার করার কথা জানান। অন্যথায় আইডাব্লিউএমে ওয়াসার সব অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হবে- এমন হুমকি দেন। আইডাব্লিউএম এই হুমকিতে অসহায় হয়ে পুলিশ হাউজিং রিপোর্টটি প্রত্যাহার করার চেষ্টা করে এবং ওই রিপোর্টের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন অত্যন্ত সৎ ও সিনিয়র প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

পুলিশ হাউজিং রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই ধীরে ধীরে তাকসিমের মিথ্যাচার আর কুর্কীতির বিষয়টি স্পষ্ট হতে শুরু করে। রাজউক ইতিমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা সংযোগ সড়কের উভয় পাশে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে খালের প্রস্থ নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশের প্রকৌশল জ্ঞানের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) পানি সম্পদ কৌশল বিভাগকে দায়িত্ব প্রদান করে। অতি সম্প্রতি বুয়েট ওই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে বলে জানা যায়। বুয়েটের রিপোর্টটি রাজউক অনুমোদন করে ড্যাপ রিভিউ কমিটিতে প্রেরণ করলে সেখানে রিপোর্টটি অনুমোদিত হয় বলে জানা যায়। বুয়েটের রিপোর্ট অনুযায়ী, কুড়িল-পূর্বাচল সংযোগ সড়কের উভয় পাশের এলাকার বৃষ্টির পানি সড়কসংলগ্ন অংশে প্রবাহিত না হয়ে মূলত বোয়ালিয়া খাল এবং কাঁঠালদিয়া খাল দিয়ে বালু নদীতে নিষ্কাশিত হবে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সংযোগ সড়কের উত্তর পাশে কুড়িল মোড় থেকে বোয়ালিয়া খাল পর্যন্ত স্থানভেদে আট থেকে ২৫ ফুট সড়কসংলগ্ন খাল তৈরি করলেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হবে; কোনোভাবেই ১০০ ফুট খাল প্রয়োজন হবে না। বুয়েটের রিপোর্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সংযোগ সড়কের উত্তর পাশে বোয়ালিয়া খাল থেকে বালু নদী পর্যন্ত এবং সংযোগ সড়কের দক্ষিণ পাশে কুড়িল মোড় থেকে বালু নদী পর্যন্ত সড়কসংলগ্ন কোনো খাল প্রয়োজন হবে না।

বুয়েটের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর তাকসিমের ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং তিনি একের পর এক মিথ্যাচার করতে থাকেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে তিনি বুয়েটের ভিসি, কনসালট্যান্সি কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক এবং পানি সম্পদ কৌশল বিভাগকে রিপোর্টটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। বুয়েটের রিপোর্টটি প্রধানমন্ত্রী অবগত হলে তাকসিমের এত দিনের মিথ্যাচারের বিষয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হবেন বলেই তাকসিম এ কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, ১০০ ফুট খালের জন্য জমি অধিগ্রহণে আনুমানিক ১৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা বহন করা বাংলাদেশের মতো গরিব রাষ্ট্রের পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ ও অযৌক্তিক। এ ছাড়া এই জমি অধিগ্রহণে জনরোষের সৃষ্টি হবে। এটা বর্তমান সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য তাকসিমের অপপ্রয়াস বলে অনেক মহল মনে করছে। ওয়াসার এমডি তাকসিমের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও মিথ্যাচার দেশের তথা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর কালিমা লেপন করার শামিল হবে। সুত্র: কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।