বগুড়া: মিছিল নাই, মিটিং নাই, জনগণও সাথে নাই, মিছেই ক্যা বিএনপি-জামায়াত হরতাল ডাকে? ২০ দলের হরতাল নিয়ে এমন প্রশ্ন ডিম বিক্রেতা শফিকুল ইসলামের।
বললেন, প্রথম প্রথম কয়দিন হরতাল-অবরোধ পালন হলেও এখন কেউ আর মানেনা, হয়ও না।
শুধু শফিকুলই নয়, তার মতো আরও অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মুখেও শোনা গেলো একই কথা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবসায় তো লোকসান রয়েছেই, এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে তাদের।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকায় আলাপ-চারিতায় শফিকুল বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলে, দোকানপাটও খুলে। ভয় খালি একটাই, কখন যে ককটেল-পেট্রোল বোমা গায়ের উপর পড়ে। আওয়ামী লীগের সাথে পারে না, অত্যাচার খালি গরীব গের উপর। ’
তার সঙ্গে যোগ দেন খবরের কাগজ বিক্রেতা কৃষণ। জানালেন, হরতাল পালন না হলেও সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক থাকে। সেটা ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ বড় প্রভাব ফেলে।
‘এহুন আর হরতালওয়ালাদের রাস্তায় দেখা যায়না। ইংক্যা হরতাল দিয়ে লাভ কী? হয় ভালো কইরা হরতাল করুক, নাহলে হরতাল বাদ দিয়্যা দেশের মানুষক শান্তিত থ্যকবার দিক,’—বলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যেও বগুড়ার শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ মানুষের বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এছঅড়া বগুড়া থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন যানবাহনও ছেড়ে যাচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে শত শঙ্কা উপক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতও স্বাভাবিকভাবে চলছে। শহরের যানবাহন সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকেও।
বাদাম বিক্রেতা ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, সব ধরনের গাড়িই চলে, খালি আশপাশে মিছ্যাই ককটেল ম্যাইরা মানুষ খাম করে। এ্যাইডা কোন হরতালের সাইজ হলো? একই কথা পিঠা বিক্রেতা বিপ্লবেরও।
সাত মাথা এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সারাদিনই রাস্তায় গাড়ি চলে, যানজট লেগে থাকে প্রায় সব সময়ই। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে হরতালের যানবাহন সামলাতে।
এদিকে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই চলছে জন-জীবন। কর্মসূচির সমর্থনে ২০দলের কোনো নেতাকর্মীকে দেখা না গেলেও রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগসহ ১৪দল নেতারা।
পেট্রোল বোমা আর ককটেলে যে আন্দোলন হয় না-বিষয়টি বেশ উপলব্ধি করেছেন স্বয়ং বিএনপি নেতারাও। কিন্তু তারা কোনো পথ দেখছেন না আন্দোলন নিয়ে! তাই মেনে নিতে হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া জেলা বিএনপির এক নেতা বাংলানিউজকে জানান, পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়িয়ে আন্দোলন হয় না সত্য। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে কোনো আন্দোলনেই এভাবে মাঠে নামতে হয়নি। আর নামলেও মাঠ ছাড়তে হয়নি।
‘বয়স যাই হোক, এখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে মোকাবেলা করার সাহস রাখি। শুধুমাত্র নেতৃত্বের কারণে মাঠে তো নামতে পারছিই না, বরং কঠোর আন্দোলন না করেও পুলিশের ভয়ে নিজেকে আড়াল করে থাকতে হচ্ছে, এটাই দুঃখ,’—বলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।
জেলা কমিটির আরেক নেতা বলেন, আন্দোলন করে রাজপথ থেকে গ্রেফতার হলেও কোনা অসুবিধা নেই, কিন্তু এখন গ্রেফতার হবো জোটের শরীক দলের বোমাবাজির কারণে।
‘এটা মেনে নেওয়া যায় না, এটা হয়েছে শুধুমাত্র রাজপথে বিএনপি না থকার কারণে,’—যোগ করেন তিনি।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, যে কারণেই হোক ৫ জানুয়ারির পর প্রথম কয়েকদিন হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি কিছুটা পালনের মতো মনে হলেও এক সপ্তাহ গেলেই প্রায় সব মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
এর প্রমাণ মেলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের দৃশ্য দেখেই। ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বগুড়ার উপর দিয়ে প্রায় দুই লাখ গাড়ি চলাচল করেছে। যা অনেকটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫