খুলনা: বরযাত্রীর গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলার ভয়ে বাগেরহাট যাওয়া বাতিল করেছেন খুলনার আমজাদ হোসেন। একমাত্র ছেলের বিয়ে অনেক ধুমধামে দেবেন এমনটি প্রত্যাশা ছিলো এতো দিন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বরযাত্রী নিয়ে যশোর যাওয়ার কথা ছিল নগরীর নিরালার আরিফ খানের। কিন্তু হরতাল-অবরোধে এতো দূরে বরযাত্রী যাওয়া সম্ভব নয় চিন্তা করে অনুষ্ঠান বাতিল করেন তিনি।
নগরীর ইসলামপুর রোডের শাহীনা বেগম গত এক মাস ধরে তার ছেলের বিয়ের তারিখ শুধু পরিবর্তন করছেন।
শুধু আমজাদ হোসেন, আরিফ খান ও শাহীনা বেগম নয় তাদের মতো অনেকে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান ঘরোয়া পরিবেশে করছেন। আবার কেউ কেউ তারিখ পরিবর্তন করছেন। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার অথবা পার্টি সেন্টারগুলো।
সেন্টারগুলোতে অনুষ্ঠানের পরিমাণ আগের থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলানিউজকে তারা জানান, চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে অনেকেই বুকিং বাতিল করছেন।
শাদী মোবারকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৩০/৪০টি অনুষ্ঠান হতো। এখন সেখানে হচ্ছে ৫/১০টি অনুষ্ঠান।
তিনি জানান, আগে শীত মৌসুমের সময় পার্টি সামলাতে হিমশিম খেতে হতো। আর এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের কারণে থেমে গেছে সামাজিক অনুষ্ঠান।
কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টারের বুকিং সহকারীরা জানান, এ সময় কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিংয়ের হিড়িক থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য তা অনেকাংশে কমে গেছে।
খুলনার হোটেল ক্যাসল সালামের ফ্রন্ট ডেক্স অফিসার সাজিদ আহমেদ বলেন, বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের এখন ভরা মৌসুম হলেও কেউ হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারমুখী হচ্ছেন না।
আবার অনেকেই আগে থেকে দেওয়া বুকিং বাতিল করছেন।
একই কথা বলেন হোটেল অ্যামবাসেডরের জেনারেল ম্যানেজার মো. আল-আমিন লিটন।
খুলনা প্রেসক্লাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সঞ্জয় দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধে সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়াম বুকিং কমে গেছে।
তিনি জানান, সাধারণত শীতের শেষ দিকটা গায়ে হলুদ, বিয়ে, আকিকা, সুন্নতে খতনা, মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়াম ভাড়া হতো। কিন্তু হরতাল অবরোধে অনেকেই বুকিং দেওয়া কর্মসূচিও বাতিল করে দিচ্ছেন। এতে গত বছরের তুলনায় আয় অনেক কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কমিউনিটি সেন্টারের মালিক বলেন, ভরা মৌসুমেও আমরা হরতাল-অবরোধের কারণে বুকিং পাচ্ছি না। অথচ এ সময় আমরা পার্টি সামলাতে হিমশিম খেতাম।
তিনি জানান, কেউ কেউ অল্প পরিসরে অনুষ্ঠান করছেন। আগে যেখানে ২০০ মানুষ আসতেন, সেখানে এখন আসছেন ১০০ জন। খুলনার বাইরে থেকে আত্মীয়রা আসতে পারছেন না বলে আয়োজন কমে যাচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ছোট-খাটো দু’একটি অনুষ্ঠান দিয়ে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। যে কারণে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫