ঢাকা: বড় আশা নিয়ে ছেলেকে দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। দেশ গড়ার কাজে বলিয়ান হয়ে নিজের ও পরিবারের গৌরব বয়ে আনবে।
বিদ্রোহের ছয় বছর পর আবার ফিরে আসে সেই ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছেলের কবর জিয়ারত করতে আসেন মিজানুর রহমানের মা কোহিনুর রহমান (৫৫)। সেখানে ছেলের সেদিনের কিছু কথা বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
ঘটনার দিন সকাল পৌনে ৮টায় বাসা থেকে বের হন মিজানুর রহমান। কিছুক্ষণ পর গর্ভধারণী মা জানতে পারেন পিলখানায় গোলাগুলি হচ্ছে। শুনেই আতকে উঠেন।
মিজানুরের মা বলেন, ছেলে সেই যে গেলো আর একবারের জন্যেও কথা বলতে পারলাম না। পরে ওদের একজন এসে বলেন মিজান স্যারকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে গুলির শব্দ। মিজানের দুই ছেলেকে নিয়ে আমি বাসায় অপেক্ষা করছি। আমার নাতিদের গায়ের উপর শুয়ে পরলাম। আর আল্লাহর কাছে বলতে লাগলাম, আল্লাহ ওদের প্রাণ নেওয়ার আগে যেন আমার প্রাণ যায়। একথা বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে দেন মিজানের মা।
মেজর মিজানুর রহমান দুই ছেলে তাহসিন রহমান রামীম এবং ফারদিন রহমান সামী রেখে মিজানের স্ত্রী দূরারোগ্য ব্যাধি ব্রেইন ক্যান্সরের কাছে হার মেনে ৯ মাসে আগে পরলোক গমন করেন। এরপর দুই ছেলে বাবাকে হারান।
মিজানুর রহমানের বড় ছেলে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরছে বলে জানান তিনি।
ছেলের এভাবে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন কোহিনুর রহমান। এখন তার একটাই আশা, যারা এ হত্যাকাণ্ড করেছে তাদের শাস্তি দেখে যাওয়া।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিজানুর রহমানের মা কোহিনুর রহমান বলেন, আর কী চাইবো। ছয় বছর পার হয়ে গেছে এখনো বিচারের রায় কার্যকর হলো না। আর কি চাওয়ার আছে। এখন আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আল্লাই বিচার করবেন।
শুধু মিজানুর রহমানের মা নয়, এদিনটি স্মরণ করতে আসেন কোনো অফিসারের স্ত্রী, কারো বা বোন, কারো ভাই। সবাই প্রিয়জনের জন্য আল্লাহর কাছে বিচার চান।
স্বামী হারানোর আট মাস পর সন্তানের জন্ম ;
এরকম আরো এক সেনা অফিসার মেজর মো. রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সানজানা সোনিয়া জোবায়দা (৩০) বাংলানিউজকে বলেন, বলার কী আছে। আর চাওয়ার কী আছে। আমার স্বামীকে কী কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন। ও (স্বামী) মারা যাওয়ার আট মাস পর আমার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এই ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে এখন আমি কী করবো। আমার ছেলে মাঝে মাঝেই বলে আব্বু কোথায়। আমি কী জবাব দেব।
তিনি বলেন, আমার একটাই চাওয়া যেন শুধুমাত্র বিদ্রোহকারী নয়। এর নেপথ্যে যারা ছিলো তাদেরও যেন বিচার হয়। শুধু বিচারের রায় ঘোষণা নয়, রায় কার্যকরও দ্রুত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫