ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘ক্যাতা-বালিশ পাইছি হাড়ি পাতিল কনে!’

মফিজুল সাদিক ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫
‘ক্যাতা-বালিশ পাইছি হাড়ি পাতিল কনে!’ ছবি: নাজমুল হাসান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শাহানুর(৪৫)। পরের বাসা বাড়িতে কাজ করেন।

স্বামী হেলাল রিকশা চালান। রাজধানীর আগারগাঁও বস্তির আগুনে সব কিছু পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে মেয়ে স্বপ্না (১৯) ও রুপা (১৭) এবং ছেলে নূর (১২) ও মমিনকে (৭) নিয়ে খোলা আকাশের নিচে কাঁদছিলেন তিনি।

বস্তির আগুনে সব কিছু পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। বাড়িতে চার হাজার টাকা ছিল তাও পুড়ে গেছে। শাহানুরের বড় মেয়ে স্বপ্নাকে বলেন, ‘ক্যাতা (কাঁথা)-বালিশ পাইছি, হাড়ি-পাতিল কনে?’

বড় মেয়ে স্বপ্নার কথা অনুসারে এটুকু ছাড়া সব কিছুই পুড়ে গেছে।

শাহানুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব পুড়ে সাফ। একটা সুতাও নাই। কিস্তির ট্যাকায় খাট কিনছি, হ্যাও পুড়ছে। আছে খালি বালিশ-ক্যাতা। রান্না কইরা ভাত খামু সেই হাড়ি-পাতিলও নাই। ’

আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশের বস্তির এ আগুন শুধু শাহানুরকেই ঘরছাড়া করেনি। এখানে প্রায় তিন শতাধিক ঘর ছিল। স্থানীয়রা দাবি করেন, সবাই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রায় দেড়শ’ ঘর পুড়ে গেছে।

বস্তির আগুনে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোপালগঞ্জের তুহিন শেখের। চার বছর বয়সের আদরের সন্তান সজিব আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। তুহিন পাসপোর্ট অফিসে কেরানির চাকরি করেন।

আনোয়ার মিয়া (৩০)। নগরীতে রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। আগুন লাগার সময় বাইরে ছিলেন। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরে এসে দেখেন, ততোক্ষণে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে তার। সংসারে জমানো ১৬ হাজার টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্বামীহারা নাসিমা খাতুন (২৫)। পরের বাসায় কাজ করে সংসার চলে তার। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি অন্যের বাসায় ছিলেন। এসে দেখেন, সব কিছু পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে কুঁকড়ানো হাড়ি পাতিল, কলস, চুলা দেখে কাঁদছিলেন তিনি।   নাসিমার মনের অবস্থা দেখে কোনো কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে।

পাশেই থাকেন গোল নাহার বানু। নাসিমার মতো তারও সব কিছু পুড়ে অঙ্গার। তিনি বলেন, ‘যেগুলো ছিল সবই পুড়া গ্যাছে। নতুন কাপড় চুপড়, তিন হাজার টাকা। কিছু নাই। আমি ঘরে ছিলাম না। ঘরে আমার ছোট ছেলে মতি ছিল, পরে তারে পাইছি’।

বস্তির আগুন দেখে পাশের বস্তির সবাই অন্যত্র আশ্রয় নেন। সেখানকার শতাধিক বস্তিবাসী  সংসারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বের করে নিরাপদে আশ্রয় নেন। তাদের
মধ্যে একজন  গোলনারা। তিনি বাংলনিউজকে বলেন, ‘আগুন লাগছে, তাই ঘরের মালপত্র পথে বার করছি। সুবহান আল্লারে, এমন আগুন কখনও দেহিনি। ’

তবে আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় কাজ শুরু করে ২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে প্রায়
দেড়শ’ ঘর পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা একটু আগুনে পুড়ে নিহত শিশুকে উদ্ধার করেছি। আগুন লাগার কারণ পরে তদন্ত করে বের করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

** অগ্নিকাণ্ডে নিহত সজীবের পরিবার পেল ২০ হাজার টাকা
** আগারগাঁও বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, শিশুর মরদেহ উদ্ধার
** আগারগাঁওয়ে বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।