ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্বর্ণ চোরাচালান

বিমানের ২৭২ কর্মী জড়িত, আত্মগোপনে ৪৪ জন

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
বিমানের ২৭২ কর্মী জড়িত, আত্মগোপনে ৪৪ জন

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারে বিমান বাংলাদেশে এয়ার লাইন্সেরই বিভিন্ন পর্যায়ের ২৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এদের মধ্যে গ্রেফতারের ভয়ে ৪৪ জন বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।


 
সর্বশেষ গ্রেফতারের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ডেপুটি চিফ অফ ট্রেনিং শামিম নজরুল। স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার বিষয়টি সব মহলেই ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে।
 
দেশের স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন এক অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে আসে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সদর দফতরে প্রেরণ করেছে। পরে পুলিশ সদর দফতর দেশের বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দাদের নিকট তথ্য পাঠিয়েছে।

গোয়েন্দা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর বিমানের বিজি ০৪৬ ফ্লাইটের স্টুয়ার্ড মাজাহারুল ইসলাম রাসেল ২ কেজি স্বর্ণসহ আটক হন। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, এ ব্যাপারে তথ্য প্রদান করেন তিনি। পরে গোয়েন্দা পুলিশের দলটি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিসের ডিজিএম এমদাদ হোসেন, চিফ অফ প্লানিং অ্যান্ড সিডিলিউংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহিদ, ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হক, ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ, ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুনুর রশিদকে আটক করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদুল হক পলাশ নিজেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ধর্মপুত্র পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি স্বর্ণ পাচার, বিমানে নিয়োগ, বদলি, বিমান লিজসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে কমিশন গ্রহণ করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার এ সকল কর্মকাণ্ডে সহযোগী রয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী কেবিন ক্রু নূর জাহান, জেনারেল ম্যানেজার (নিরাপত্তা) মোমিনুল, জেনারেল ম্যানেজার (এ্যাডমিন) আতিক সোবহান,  ডাইরেক্টর অ্যাডমিন রাজপতি সরকার, ক্যাপ্টেন মাহাবুব, শোয়েব চৌধুরী, ও ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসেন।
 
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঊর্ধ্বতন এ সকল কর্মকর্তা ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫ জন পাইলট, ৪ জন কো পাইলট, ২৫ জন কেবিন ক্রু, ১৫ জন ফ্লাইট স্টুয়ার্ড, ৩ জন ফ্লাইট পার্সার ও ৫ জন চিফ পার্সরসহ মোট ২৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ পাচারে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ নভেম্বর চোরাচালানের দায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওই কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ২ জন পাইলট, ৩৪ জন কেবিন ক্রুসহ বিমান বাংলাদেশের মোট ৪৪ জন সদস্য বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। এছাড়া দেশ থেকে পালিয়ে যায়ং ডেপুটি চিফ অফ টেনিং শামিম নজরুল ইসলাম।

বিমানের এসব কর্মকর্তাদের চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। পাশাপাশি তারা আত্মগোপনে থাকার ফলে ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

বিমানবন্দর শুল্ক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, এই ধরনের তথ্য সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে বিমানবন্দর ব্যবহার করে কোন গোষ্ঠী যেন এই অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চোরাচালান প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে বিমানের যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম এসেছে।

তিনি জানান, এর মধ্যে অনেকেই বিদেশে পলাতক রয়েছেন আবার অনেকে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। এদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। তাদের খোঁজ পাওয়া গেলে গ্রেফতার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।