ঢাকা: মোট জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিকে সমর্থন করে বলে দাবি করেছেন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক যৌথ মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বলেন, এই সমর্থন সুবিধাভোগীদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।
সিএজি কার্যালয়, দুদক, তথ্যকমিশন, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধিকরণে এ যৌথ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
সভায় অন্যান্য আলোচকরা দাবি করেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে; তাদের এ বক্তব্যের বিষয়ে মাসুদ আহমেদ ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের বড় মনে করেন। এ ধরনের অপরাধ দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্তরায়।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে সমর্থনের পেছনে বাদী, বিবাদী, প্রসিকিউটরসহ মামলার তদন্ত কাজের সঙ্গে জড়িতদের স্বার্থ দেখা যায়।
দুদকের সমালোচনা করে মাসুদ আহমেদ বলেন, দুদক এমন কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি, যাতে মানুষ দুর্নীতিকে ভয় পাবে।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে আরো স্বচ্ছ করতে হলে এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানকে জানা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, জাতীয় সংসদে দুর্নীতি বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। সেখানে আলোচনা না হলে দুর্নীতির কোনো সমাধান বের হচ্ছে না। সংসদে আলোচনা হলে অবশ্যই কোনো না কোনো সমাধান আসবে। কিন্তু সংসদে কোনো আলোচনাই আসছে না।
প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক বলেন, শুদ্ধাচার নীতিমালার আলোকে আমরা মিটিং করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুর্নীতি প্রতিরোধের একটি কৌশল হলো তথ্য প্রকাশ করা। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান ১১০০ আইন রয়েছে। জনগণ তথ্যকমিশন আইনের মাধ্যমে তার তথ্যঅধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ূন কবীর বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের কাজে যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন— দুদকের ডিজি মো. শহিদুজ্জামান, তথ্যকমিশনের সচিব মো. ফরহাদ হোসেন ও সিনিয়র ডেপুটি সিএজি আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবিদ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, উপযুক্ত আইন, শক্তিশালী বিচার ও নির্বাহী বিভাগ, শিক্ষা, দুর্নীতিমুক্তি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ও গণমাধ্যম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ব্যাপক গণসচেতনতা দুর্নীতি দমনে সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত।
এ ছাড়া তথ্য আদান-প্রদানে নিজেদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন- সিএজি অফিস তথ্য প্রাপ্তির সীমারেখা, আদায়যোগ্য অর্থ, অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কে একটি ধারণাপ্রুত দুদককে প্রদান করা, সংরক্ষিত বা অপ্রকাশযোগ্য তথ্যের বিষয়ে দুদকের সঙ্গে আলোচনা করে একটি তথ্য বিনিময় কাঠামো তৈরি করা, সমন্বিত মতবিনিময় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, অডিট ও দুদকের ভীতি দূর করা, মাঠ পর্যায়ে কাজে পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা এবং দুর্নীতির কোনো তথ্য অডিট বিভাগের নজরে আসলে, তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুদককে অবহিত করার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা।
এ ছাড়া পুলিশ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
যৌথ মতবিনিময় সভায় সিএজি, দুদক, তথ্য কমিশন ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫