ঢাকা, রবিবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা

ডিপ্লোম্যাটিক করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা

ঢাকা: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের(ইপি)মানবাধিকার বিষয়ক উপ কমিটি। যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বিচার বর্হিভুত হত্যা, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, এনজিওগুলোর জন্য বিদেশি অনুদান আইনের বিষয়ে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।



ইপির মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইউরোপীয় এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসেসের (ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগ) একজন প্রতিনিধি বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে তাঁরাও উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় কমিটির সদস্য ও পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমইপি)উদ্বেগের কথা জানান। পাশাপাশি উদ্বেগ এসেছে সংলাপের বিষয়ে রাজনীতিকদের অনাগ্রহ নিয়েও।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য থমাস নিকলেসন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা, রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণের গণ গ্রেফতার এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের অনিচ্ছা ও অনাগ্রহের মত ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। সেই সাথে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানোও জরুরি। যে উদ্বেগ জানানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। যখন বাণিজ্যের কথা বলা হয়, বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে অভিন্ন উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও অভিন্ন অবস্থান রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

যার ভিত্তিতে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলাম। যেখানে মানবাধিকার উপকমিটি সেখানে সুশাসন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং অভিবাসন নিয়ে কাজ করেছে।

আরেক পার্লামেন্ট সদস্য সি টানোক বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এর রয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান। এখানে বৈদেশিক সহায়তা নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিষয়টি রাশিয়ার মত নয়। রাশিয়া বৈদেশিক সহায়তা আইন দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নয়। চিকিত্সা খাতে, কর্মপরিবেশসহ বেশ কিছু খাতে বাংলাদেশের প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এগুলো সরকারই সমাধান করে।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সি টানোক বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের আইনি লড়াই করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর আইনি লড়াই লড়তে আইনজীবীদের অর্থ সহায়তা দেয় সৌদিআরব, কুয়েতসহ বেশ কিছু দেশ। ফলে বাংলাদেশকে রাশিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বাংলাদেশ একটি রোল মডেল নারী শিক্ষার জন্য। এছাড়া নারীর সমঅধিকারের জন্যও বাংলাদেশ রোল মডেল।

সি টানোক বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় বলেন, বাংলাদেশকে একরকম ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। যার ফলে অনেক কিছুতেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হয়। এ জন্য বাংলাদেশেকে আমাদের সমর্থন করতে হবে।

প্রতিবেদন উপস্থাপন সেমিনারে জেনেভায় থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগিতাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতির নামে সংগঠিত ভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা বাংলাদেশের নিয়মিত জীবন যাত্রাকে ব্যহত করছে। আর তা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংক্ষলা বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ করছে। এছাড়া এ সময়ে  তৈরি পোশাক শিল্পে মানদণ্ড উন্নয়নে বাংলাদেশের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন।

এর আগে বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দল। বর্তমান রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক এবং নাগরিকদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিনিধি দলটি।
এছাড়া প্রতিনিধি দলটি সরকার এবং বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকে অনতিবিলম্বে বাড়তে থাকা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানেরও আহ্বান জানান।

সফরে আসা প্রতিনিধি দল তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন, বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সফরের মূল উদ্দেশ্য। যার মধ্যে শ্রম অধিকার, শিশু অধিকার, নারী অধিকার ও সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়টিও রয়েছে।  

বিভিন্ন বৈঠকে প্রতিনিধি দল বর্তমান রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক এবং নাগরিকদের অধিকারের বিষয়টি বিশেষ ভাবে নজরে আনে। এছাড়া প্রতিনিধি দলটি সরকার এবং বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকে অনতিবিলম্বে বাড়তে থাকা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানেরও আহ্বান জানান।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় সংসদে পাশ হওয়া রেজুলুশনের আলোকে বর্তমান পরিস্থিতিতেও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জোর করে গুম করা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে। এছাড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি উদ্বেগের বিষয়। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করে শান্তি ও স্থীতিশীলতা পুনঃউদ্ধার করা উচিত হবে না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বহুমাত্রিক ও গতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজের মৌলিক অধিকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।