ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রথাবিরোধী লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছিল ঠিক একই ভাবে হামলা চালানো হল সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ওপর। ঠিক ১১ বছর পর আবার সেই ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তিই ঘটল।
তবে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারলেন না অভিজিৎ রায়।
বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে বইমেলার সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অভিজিৎ রায়। এরপর রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও। তার অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে দুটি চাপাতি এবং রক্তের ছোপ ছাড়াও পরে ছিল একটি কাটা আঙুল। একটি ল্যাপটপের ব্যাগও ছিল সেখানে।
পরে চাপাতি এবং ব্যাগ পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)সিরাজুল ইসলাম।
ঠিক ১১ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি সংলগ্ন পরমানু শক্তি কমিশনের সামনে হামলার শিকার হয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ।
তখনও ঘটনাস্থলে চাপাতি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল বলে জানা যায়।
তার হামলায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা বেরিয়ে এসেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে।
অভিজিৎ রায়ের ওপরও একই জঙ্গী গোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করছেন পুলিশসহ অনেকে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তারাই একইভাবে আবার হামলা চালিয়েছে। ”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদও বললেন একই কথা, ‘অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার ধারাবাহিকতায়ই আজকের এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। ’
এদিকে অভিজিতের কয়েকজন বন্ধুসহ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, প্রগতিশীল লেখালেখির কারণে অনেক দিন ধরেই ফোনে- অনলাইনে জঙ্গীদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন অভিজিৎ রায়। ঠিক একই ভাবে হুমায়ুন আজাদকেও হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা।
এদিকে লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের ধরতে ডিবির পাশাপাশি পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান ।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লেখক অভিজিত রায়ের লাশ দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাসপাতালেও এসেছি। ঘটনাটি অনেক মর্মান্তিক। নৃশংসভাবে তাদের কুপিয়ে হত্যা ও আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এরইমধ্যে ডিবি ও পুলিশের টিম অভিযানে নেমেছে।
এদিকে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। হামলার ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে তারা এ নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ এবং গণ জাগরণ মঞ্চ।
শিক্ষকরা সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসে জড়ো হবেন এবং গণজাগরণ মঞ্চ সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেবে।
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি গত আট বছর যাবত পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. অজয় রায়ের ছেলে তিনি।
এবার একুশের বইমেলায় দুটি বই প্রকাশ হয়েছে অভিজিতের, সে কারণেই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন।
তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫