ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

১২ বছর ধরে বাংলায় কথা বলি

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
১২ বছর ধরে বাংলায় কথা বলি ছবি: জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হিরুকি ওয়াতানাবে। নাম শুনেই বোঝা যায়, তিনি বাংলাদেশি বা বাঙালি নন।

কিন্তু অনর্গল কথা বলছেন বাংলায়। তিনি একজন জাপানি। কিন্তু নিজেকে জাপানি বলে পরিচয় দিলে একটু মন খারাপ করেন। কেন এমনটি?

এর উত্তরে হিরুকি ওয়াতানাবে জানান, এভাবে ১২ বছর ধরে বাংলায় কথা বলছেন তিনি। তার বক্তব্য হচ্ছে, এক কথায় বাংলায় পড়ি, বলি, লিখি।
২০০২ সালে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে তার বাংলাদেশে আসা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন। মাত্র তিন মাসে অনেক বাংলা শব্দ ও বাক্য রপ্ত করে ফেলেন। ৬ মাসের মাথায় শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলা ও সবার সঙ্গে বাংলায় যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।

এখন তিনি একটি বেসরকারি সংগঠনের হয়ে সবার সঙ্গে শুধু বাংলায় কথা বলছেন। শুধু তাই নয়, বাংলায় একটি চলচ্চিত্র তৈরির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। শহুরে প্রেম নিয়ে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে বাঙালির বড় উৎসব পহেলা বৈশাখের দিনে।

হিরুকি ওয়াতানাবে প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে যান শহীদ মিনারে।

ফুল দিতে গিয়ে তার চোখে ঝরে পানি।

হিরুকি বলেন, আমি একুশের ভোরে, সকালে এবং দুপুরে তিনবার শহীদ মিনারে যাই। যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দেই আর, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি শুনি তখন অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

ভাষার মাসের শেষ দিনে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়ে আগাগোড়া বাংলায় এসব কথা বলছিলেন বাংলা ভাষার এই বিদেশি বন্ধু হিরুকি ওয়াতানাবে।    

তাকে ভাষা শিখতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটের বন্ধুরা।

শিখতে গিয়ে বাংলা ভাষা একটু কঠিন মনে হলেও  জাপানের সঙ্গে এ ভাষার ব্যাকরণগত অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এখন তিনি বাংলায় বলা, লেখা ও পড়ার কাজ করতে পারেন খুব সহজেই।

হিরুকি মনে করেন, বিদেশি যে কেউ বাংলা তিন মাসেই শিখতে পারবেন। তবে ভালোভাবে বাংলা শিখতে ও বলতে লাগবে প্রায় ৬ মাস।  

বাংলা ভাষা শিখে নিজে এখন অনেক আনন্দিত জাপানি নাগরিক হিরুকি। তিনি বলেন, মানুষ নিজের জীবন প্রাণ রক্ত দিয়েছে যে ভাষার জন্য, সেই ভাষা শিখে অনেক ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি জাতি তার ভাষাকে শ্রদ্ধা করতে শিখছে।

বাংলাদেশে প্রায় এক যুগ ধরে থেকে তার উপলব্ধি, বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। আর এখানে সংস্কৃতির জায়গাটা খুব বিশাল, যা তাকে মুগ্ধ করেছে।
জাপানে তারা মা-বাবাও কিছু কিছু বাংলা বলতে পারেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তার মতোই একজন জাপানি নাগরিককে বিয়ে করেছেন।

বাংলা ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের প্রতি তার পরামর্শ, বাংলা ভাষা চমৎকার । তাই এ ভাষায় কথা বলতে গিয়ে ইংরেজি যোগ করলে খারাপ দেখায়। যেমন খারাপ দেখায় ইংরেজি বলতে গিয়ে কেউ বাংলা শব্দ যোগ করলে।

তিনি বলেন, যখন বাংলায় কথা বলি, তখন বাংলায়ই কথা বলা উচিত। বাংলা কথা বলতে গিয়ে আমরা যেসব ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করি, সেগুলোরও চমৎকার বাংলা শব্দ রয়েছে।

হিরুকি জানান, ২০০২ সালে এসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। কাজ করছেন একমাত্রা সোসাইটির সঙ্গে। এ সংগঠনের হয়ে পথশিশুদের উন্নয়নের সঙ্গে কথা বলা ও পড়ালেখা শেখানোর কাজ করে থাকেন।

একমাত্রা সোসাইটি একটি অলাভজনক প্ল্যাটফর্ম যা মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে একমাত্রা সোসাইটি এসব শিশুদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও আবাসনসুবিধা প্রদানসহ নানামুখী সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।