ঢাকা: তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে উদ্বেগের কথা ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এ সব কথা জানিয়েছেন।
ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের পৃথক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সঠিক কোন বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে জানতে চাইলে শহীদুল হক সরাসরি উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন, এটিকে তারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এ সমস্যার সমাধান করতে চায় ভারত।
তিস্তা নিয়ে এই মুহূর্তে তিন ধরনের উদ্বেগ আছে বাংলাদেশের। সেগুলো হচ্ছে- তিস্তার পানি সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যাওয়া, দীর্ঘদিন (২০১১ সাল থেকে) চুক্তি ঝুলে থাকা ও চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর ‘কারিগরি’ প্রশ্ন তোলা আরো এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ভারতের মনোভাব প্রসঙ্গে সচিব শহীদুল হক বলেন, ভারতের এই সরকারের বিশেষ একটি দিক লক্ষ করেছি আমরা। তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চায়। অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধান করতে চায়।
তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান সরকার আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ নজর (ফোকাস) দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক, উপআঞ্চলিক, আঞ্চলিকসহ সব বিষয়ে মতের আদান-প্রদান হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার বৈঠক গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, আমরা আরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
বৈঠক শেষে সুব্রামিনিয়াম জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সফরে আসতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত। বাংলাদেশ সফর আমার সার্ক যাত্রার একটি অংশ। আমাদের মধ্যে খুব ফলপ্রসু বৈঠক হয়েছে।
‘এখন দিনের অন্যান্য বৈঠকগুলোর জন্য অপেক্ষায় আছি। আমরা সার্ক, বিমসটেক এবং দ্বি-পক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি,’—যোগ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সংক্ষিপ্ত সফরে দুই দেশের সার্বিক সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা নিয়ে আলোচনাসহ দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক হয়েছে।
বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের তিনটি দিক দ্বি-পক্ষীয়, উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জতিক বিষয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শহীদুল হক বলেন, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত তার নিজ নিজ দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।
এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্বি-পক্ষীয় বিষয়ে সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের ব্যাপকতা অনেক বেশি। প্রতিটি ইস্যু নিয়ে দুটি করে বাক্য লিখলে ২৫ পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। ফলে সংক্ষিপ্ত সৌজন্যমূলক দ্বি-পক্ষীয় এ বৈঠকে প্রতিটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। তা সম্ভবও নয়।
‘বিস্তারিত আলোচনার জন্য এফওসি (ফরেন অফিস কনসাল্ট) রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে দুই দেশই পারস্পারিক সম্পর্ক আরও বাড়তে একমত হয়েছে,’—যোগ করেন শহীদুল হক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিষয়টি আগেও বলেছি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আমন্ত্রণের সফর তিনি (নরেন্দ্র মোদী) গ্রহণ করেছেন। সঠিক সময়েই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। এখন কোনো সময় নির্দিষ্ট করে বলা ঠিক হবে না।
উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় পানি ও বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ও মটরযান চলাচল এ দুটি বিষয় নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে।
এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যকার পরবর্তী বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
সুব্রামিনিয়াম জয়শঙ্করের সার্ক সফর নিয়ে তিনি বলেন, সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বিমসটেকের সম্ভাবনা এবং এর আওতায় কী করা যায় তা নিয়েও কথা হয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে।
ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর একদিনের শুভেচ্ছা সফরে সোমবার (০২ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসেন।
এ সময় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক তাকে স্বাগত জানান। ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর।
মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) সকালে সার্ক সফরের তৃতীয় দেশ হিসাবে পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে সার্ক দেশগুলোতে সৌজন্য সফরের কথা বলেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদী। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন সুব্রামিনিয়াম জয়শঙ্কর।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জয়শঙ্করের সফর পরিচিতিমূলক হলেও সফরকালে মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে আলোচনা হবে। এতে প্রধানত তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির হালনাগাদ তথ্য অবহিত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া তার এ সফরে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিলেন। সেই সঙ্গে শিগগিরি বাংলাদেশ সফরেরও আশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৫/আপডেটেড: ১৮০৫ ঘণ্টা, ২১৩৬ ঘণ্টা