ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিসিসির আড়াই কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা অন্ধ, ভরসা পুলিশের চোখে

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
বিসিসির আড়াই কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা অন্ধ, ভরসা পুলিশের চোখে

বরিশাল: মহানগরে দিনদিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের চারটি থানা নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এর মধ্যেও প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে।

এসব রোধে মহানগরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বরিশাল সিটি করপোরেশনও (বিসিসি) সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে।
 
পুলিশের বসানো ক্যামেরা সচল থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার নিরাপত্তায় লাগানো বিসিসির ক্যামেরা নগরবাসীর কোনো কাজে আসছে না। কোথাও ক্যামেরা চুরি হয়েছে তো কোথাও তার চুরি হয়েছে। আবার কোথাও ক্যামেরা অকেজো হয়ে রয়েছে।  

নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল নগরে ৪৪০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিসিসির সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামাল এসব ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ হাতে নেন।

নগরের সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে ৫৮টি স্থানে এসব ক্যামেরা বসানো হয়। ক্যামেরাগুলো তদারকির জন্য আটটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর দুই মাসের মধ্যে এসব ক্যামেরার প্রায় ৮০ ভাগ সংযোগ ক্যাবল (অপটিক্যাল ফাইবার) চুরি হয়ে যায়।  

আবার বেশকিছু ক্যামেরায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এসব ক্যামেরা সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ে। আর পরবর্তী পরিষদের মেয়র হয়েও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এসব সিসি ক্যামেরার তেমন কোনো খবর রাখেননি। এরপর গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোও অচল হয়ে পড়ায় বর্তমানে সেগুলো তালাবদ্ধই থাকছে।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত প্রায় ৯ বছর ধরে এসব ক্যামেরার বিষয়ে কোনো খোঁজ খবর নেননি সংশ্লিষ্টরা। আর বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক শাখার সহকারী প্রকৌশলী অহিদ মুরাদ জানান, ক্যামেরার মতো জিনিসপত্র ব্যবহার না করা হলে কিংবা চালু না থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। তবে ক্যামেরা ও তারের ক্ষেত্রে সিংহভাগ চুরি হয়েছে।

ক্যামেরাগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই তিনিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারও কাছে। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রবিদরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের এসব ক্যামেরা এখন কোনোভাবেই চালু করা সম্ভব নয়, গোটা সিস্টেম নতুন করে স্থাপন করতে হবে।

২০২০ সালে বরিশাল নগরের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রথমবারের মতো ২৯টি সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয় বরিশাল মহানগর পুলিশ। এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় ধাপে ২৬০টি উন্নত সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে।

এসবের মধ্যে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে একটি চক্র নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ১২০টির মতো সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এতে গত তিন-চার মাসে সেসব এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়ে যায়। যদিও পুলিশ এসব নিয়ন্ত্রণে আবার ১২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মনে করেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নগরজুড়ে চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম সংগঠিত করতেই পুলিশের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলে। এর ফলে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর সেই চক্রটিই বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে বরিশালজুড়ে নানা অপরাধ করে চলছে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যামেরাগুলো প্রতিস্থাপন করলে নগরে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীদের অবশ্যই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার আহ্বান থাকল। যেহেতু নগরজুড়ে আমাদের সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ঘটনা জানতে পারলে অপরাধীদের আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।

এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে বরিশাল মহানগর আরও নিরাপদ হতো বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
এমএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।