ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রিমান্ডে ফারাবী

অভিজিৎসহ একই কায়দায় হত্যা রহস্যের জট খুলতে পারে

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৫
অভিজিৎসহ একই কায়দায় হত্যা রহস্যের জট খুলতে পারে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ব্লগার ও লেখক আলোচিত অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শফিউর রহমান ফারাবী ১০ দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিজিৎ হত্যায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফারাবীর ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

বর্তমানে ফারাবীকে গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ফারাবিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি।

গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র বলছে, শুধু অভিজিৎ হত্যাই নয়, রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে একই কায়দায় খুন ও দায় স্বীকারের ঘটনায় যেগুলো এখনো অধরা রয়েছে ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়ে সেগুলোরও রহস্যের জট খুলতে পারে। সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক হিসেবে যারা আবির্ভুত হয়েছিলেন তাদেরকে চিহ্নিতসহ গ্রেফতার করা সহজ হবে।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রতিটি ঘটনা আলাদা। প্রতিটি ঘটনার প্যাটার্ন আলাদা। তদন্তের কার্যক্রম আলাদাভাবে গণ্য। লোকজন অনেক সময় আলাদা হয়। ভিকটিমও আলাদা। আমরা কাজ করছি, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা এ সকল ঘটনার পেছনে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, অভিজিৎকে যে কায়দায় হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই কায়দায় অন্তত ৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যেগুলোর এখন পর্যন্ত কোনো কূল কিনারা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ ও ব্লগার রাজীব হায়দারকে জঙ্গিরা একইভাবে আঘাত করে হত্যা করেছিল। দু’টি ঘটনাতেই জঙ্গিরা জড়িত বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদ, ২০১০ সালে উত্তরায় দলছুট জেএমবির কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসা রাশিদুল ইসলাম, ২০১৩ সালে রাজধানীর গোপীবাগে সিক্স মার্ডার, মিরপুরে ব্লগার রাজীব হায়দার ও ২০১৪ সালে পূর্ব রাজাবাজারে চ্যানেল আইয়ের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলম ও বগুড়ার একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে।

ড. হুমায়ুন আজাদকে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একইভাবে আঘাত করা হয়েছিল। ওই বছরের ১১ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান তিনি। একইভাবে ব্লগার রাজীবকে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে নিজ বাসার সামনে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসেন রাশিদুল ইসলাম। এর জের ধরে ওই বছর উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরে প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাশিদুলের বিরুদ্ধে দায়ের জঙ্গি তৎপরতার তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। রাশিদুল ২০০৫ সালে দেশব্যাপী চালানো সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নেন। ঘটনার দিন উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ৩-৪ জন যুবক ছুরি দিয়ে রাশিদুলকে আঘাত করে। তাদের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা। যুবকদের একজনের মুখে দাড়ি ছিল।

সূত্র জানায়, রাশিদুলসহ তার কয়েকজন সঙ্গীর আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানাজানি হলে উগ্রপন্থিরা তাকে টার্গেট করে হত্যা করে।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বরে চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় মুরিদ সেজে ঢুকে কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনির, পীরের খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ মো. শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিক্স মার্ডার ও ফারুকীকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে কথিত পীরের সঙ্গীদেরও খুন করা হয়েছিল। ফারুকীর বাড়িতে যারা ছিলেন হাত-পা বেঁধে রাখলেও তাদের হত্যা করা হয়নি।
 
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গোপীবাগের ঘটনায় অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। খুনিরা মোবাইল ফোনসহ কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করেনি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খুন করে পালিয়ে যায়। ওই হত্যাকাণ্ডে জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাওহীদ কর্মীদের জড়িত থাকার ব্যাপারে ধারণা করছিলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলম হত্যাকাণ্ডও একই কায়দায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথাই আঘাত করা হয় তাকেও।

এদিকে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অভিজিৎ হত্যার আগে ফারাবী তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এমনকি তিনি আমেরিকা থেকে দেশে এলে হত্যা করা হবে এমন হুমকিও দেন ফারাবী। এছাড়া হত্যার পর যেভাবে দায় স্বীকার করা হচ্ছে, তাতে করে শুধু এ হত্যাকাণ্ডই নয়, একই কায়দায় যে সকল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
 
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, শফিউল আলম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে একই কায়দায় হত্যার পর আনসার বাংলা ৭ নামের সংগঠন দায় স্বীকার করে।

ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন এমন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অভিজিৎসহ একই কায়দায় হত্যা ও দায় স্বীকার করা সকল ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হবে।

বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়-রাফিদা আহমেদ বন্যা দম্পতি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন। বুয়েটের সাবেক শিক্ষক অভিজিৎ পেশায় প্রকৌশলী আর বন্যা চিকিৎসক। ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তারা ফিরছিলেন। পথে টিএসসি মোড়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুর্বৃত্তদের হামলায় ঘটনাস্থলেই মারা যান অভিজিৎ। গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকার পথে বন্যা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৩ ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।