লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠেই শুকানো হচ্ছে বিষাক্ত তামাক পাতা। খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের নামুড়ি চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বা মাঠের পাশে তামাক পাতা শুকানো হচ্ছে।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ আবার কোথাও মাঠের চার পাশে রশি টেনে শুকানো হচ্ছে তামাক পাতা। দীঘলটারী ও উত্তর গোবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ জুড়ে তামাক পাতা শুকানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পায়ে হেঁটে ছাড়া বাইসাইকেল নিয়েও প্রবেশ করার সুযোগ নেই।
মাঠ জুড়ে তামাক শুকানোর কারণে খেলাধুলাই শুধু নয় শারীরিক কসরতও করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু শরীরে নয় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এছাড়াও তামাক পাতার বিরক্তিকর গন্ধে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে।
দীঘলটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাবিনা খাতুন, আরিফ মিয়া, সম্পা ইয়াসমিন, রেজিয়া, নয়ন মিয়া বাংলানিউজকে জানায়, তামাকের মৌসুমে মাঠে তামাক শুকানোর কারণে তারা খেলাধুলা করতে পারে না। তামাকের বিরক্তিকর গন্ধে ক্লাসে থাকতেও ইচ্ছা করে না।
বিদ্যালয়ে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ চায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তারা বিদ্যালয়ের মাঠ সব সময় খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামুড়ি চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের চারপাশে তামাক শুকাচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন।
দীঘলটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তামাক শুকানো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তামাক চাষি মজনুর তোপের মুখে পড়েন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন।
এসময় এ প্রতিবেদকের সামনেই তামাক চাষি মজনু মিয়া দম্ভ করে প্রধান শিক্ষককে বলেন, বিদ্যালয়ে জমি দিয়েছি, মাঠে তামাক শুকাবো আপনার কি করার আছে করেন।
শুধু মজনু মিয়াই নন প্রতিবছর এ মাঠে তামাক শুকান স্থানীয় অর্ধশতাধিক চাষি।
এসব এলাকার তামাক চাষিরা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর তামাক মৌসুমের দুই মাস তামাক শুকানোর জন্য তারা বিদ্যালয় মাঠটি ব্যবহার করেন। এতে কেউ কোনো দিন তাদের বাধা দেয়নি।
দীঘলটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও মাঠে তামাক শুকাচ্ছেন স্থানীয় তামাক চাষিরা। এ ব্যাপারে কমিটিকে নিয়ে মিটিং করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না তামাক শুকানো।
আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন আজাদী বাংলানিউজকে বলেন, চাষিদের সচেতনতার অভাবেই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ বিদ্যালয় মাঠে করা আইনত অপরাধ। দ্রুত তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫