ঢাকা : পুড়ে যাওয়া ঘোলাটে চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন আর জীবনের হিসাব মেলান বাদশা মিয়া। কোথা থেকে কী হয়ে গেল! ভবিষ্যতেই-বা কী হবে!
ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় শুয়ে শূন্যদৃষ্টিতে হাসপাতালের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে এ সবই ভাবেন বাদশা মিয়া।
পেট্রোল-বোমার আগুনে পুড়ে গেছে তার মুখমণ্ডল। পুড়ে গেছে বামচোখ। সে কারণে তিনি এখন এ চোখে আর কিছুই দেখতে পান না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।
বাদশা মিয়ার ছেলে আব্দুল বাসেদ বাংলানিউজকে জানান, তার বাবা মিষ্টির ব্যবসা করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটার দিকে বগুড়ার চারমাথা থেকে মিষ্টি তৈরির কাঁচামাল কিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়ের দোকানে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে, শিবগঞ্জে পৌঁছালে অটোরিকশায় পেট্রোল-বোমা ছুড়ে মারে হরতাল-অবরোধ সমর্থকরা। এতে তার মুখমণ্ডল ও চোখসহ শরীরের পাঁচ শতাংশ পুড়ে যায়।
ওই দিনই বাদশা মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
বাদশা মিয়া জানালেন, বামচোখ দিয়ে তিনি কিছুই দেখতে পান না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।
বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক সাজ্জাদ খন্দকার বলেন, হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন। আস্তে আস্তে সেরে উঠছেন তিনি। বাদশা মিয়ার চোখের কর্নিয়া পুড়ে গেছে। তবে আমরা এখনো আশা ছাড়িনি। আশা করি, ভালো হয়ে যাবেন।
তিনি জানান, যেহেতু কর্নিয়া পুড়ে গেছে, তাই কর্নিয়া পরিবর্তন করতে হবে। আর এ জন্য তার উন্নত চিকিৎসা করাতে দেশের বাইরে পাঠাতেও হতে পারে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়ে বাদশা মিয়ার বাড়ি। মৃত নোওয়াতুল্লার সরকারের ছেলে বাদশা মিয়া।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আরো পাঁচজন পোড়া রোগী।
মানিকগঞ্জে হরতাল-অবরোধ সমর্থকরা ট্রাকে পেট্রোল-বোমা ছুড়ে মারলে দগ্ধ হন ট্রাকচালক মো. ইকবাল হোসেন (২০), চালকের সহকারী সুমন (২১) ও ওই ট্রাকে থাকা আবুল কালাম (৩০) আরো একজন।
ইকবাল হোসেন জানালেন, ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে মানিকগঞ্জে যাওয়ার পথে আকিজ ফ্যাক্টরির কাছে পৌঁছালে ট্রাকে পেট্রোল-বোমা ছুড়ে মারেন অবরোধ-হরতাল সমর্থকেরা।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের বিন্নিহাটিতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিলে দুইজন আহত হন। তারা হলেন- আবুল মালেক (৪৫) জাহেদা বেগম (৪০)।
বুধবার (০৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা দগ্ধ হন। পরে রাত ২টার দিকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, এখন বার্ন ইউনিটে সহিংসতায় দগ্ধ ৫৩ জন ভর্তি রয়েছেন। ৫৩ জনের মধ্যে পাঁচজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ৯৮ জন চিকিৎসা শেষে তাদের বাড়ি ফিরে গেছেন এবং ১৪ মারা গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫