ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘কয়েল জ্বালাইয়া আর কত মশা তাড়ামু!’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫
‘কয়েল জ্বালাইয়া আর কত মশা তাড়ামু!’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘কয়েল জ্বালাইয়া আর কত মশা তাড়ামু! তাও জ্বালাইয়া রাখছি। মনের শান্তি! কিন্তু মশার কামড় থিক্কা মাপ নাই’- মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে কথাগুলো বললেন মিরপুরের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন (৪৫)।



দিনের আলো নেভেনি। তবুও মশার উপদ্রপ থেকে রক্ষা পেতে নিজ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে কয়েল জ্বালিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় রমিজ উদ্দিনকে।

তিনি মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের একজন বাসিন্দা। কালশী রোডের পাশে দীপু স্টিল হাউজ নামে তার একটি দোকান আছে।

শুধু রমিজ মিয়া নন, ঢাকা মহানগরীর নাগরিকরা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে নিয়ম অনুযায়ী, শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহের ছয়দিন নগরীর সব অলিগলিতে মশার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তাদের সচরাচর দেখা যায় না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মশক নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ মশার উপদ্রব কমছে না।

চলতি মার্চ মাসের ১ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত নগরীর মশক নিধনের জন্য উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন, সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

মিরপুর-১২ এলাকায় বালুর মাঠ। সেখানে মাঠের পাশ দিয়ে রয়েছে, বিশাল আকারের একটি ড্রেন। ময়লা-আবর্জনায় ভরা। পানির ওপরে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে।

বিকেল গড়িয়ে সাড়ে ৪টা। মাঠের পাশে জমে থাকা পানিতে দেখা যায়, অসংখ্য মশা। কিছু উড়ছে আর ভন ভন শব্দ হচ্ছে। অসংখ্য মশা বসে আছে জমাট পানির ওপরই।

রাজা মিয়া, এই এলাকার একজন সেলুন-দোকানি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মশার জালায় আমগো কিছু ভালো লাগে না। সন্ধ্যা হইতে না হইতেই মশা কামড়ায়। কয়েল ধরামু, কাম হয় না। ভাই, এত্ত বড় বড় মশা। কামড়ায় আর জ্বলে।

তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, আমাগো এহানে (এখানে) একদিনও দেহি নাই মশার ঔষুধ ছিটাইতে। সরকার ট্যাকা দেয়। আর হেরা, খাইয়া পেট (ভুড়ি) বড় করে। আর আমরা মশার কামড় খাই। হ্যাগো কী!

এই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ড্রেনে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাও ঠিকমতো পরিষ্কার করে না সিটি কর্পোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই জমে আছে আবর্জনা।

উত্তরা, ভাষানটেক, কুড়িল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, মধ্যবাড্ডা, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাংলানিউজকে জানান,  মাঝে মাঝে বিকেল বেলা মশার ওষুধ ছিটানো হলেও কাজে আসে না।

নামমাত্র ছিটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ডিএনসিসি’র কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আলম শরিফ খান বাংলানিউজকে জানান, মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উত্তর সিটি কর্পোরেশনের লোকবল আছে মোট ২৮৯ জন। এর মধ্যে স্প্রে-ম্যান আছেন ১৮৭ জন। ক্রু ১৫৯ জন। এবং সুপারভাইজার ১০ জন।

তিনি জানান, মশক নিধন যন্ত্রের মধ্যে হ্যান্ড-স্প্রে ২৫৫টি, ফগার মেশিন ১৬৭টি। মশক নিধনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টি সাইড ও ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি নামে ওষুধ।

এ বছর সংস্থাটির পক্ষ থেকে মশক নিধনের জন্য ওষুধ কেনা হয়েছে লার্ভিসাইড ৩ হাজার লিটার। অ্যাডাল্টি সাইড ১ লাখ ১০ হাজার লিটার। ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি ২০ হাজার লিটার।

সংস্থার মশক নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নগরবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা দিতে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত কর্পোরেশন কাজ করে চলেছে।

তিনি বলেন, শীতকাল শেষ হয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে। এ সময়টা মশার উপদ্রব বাড়ায় মশক নিধনের জন্য ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি।

তিনি আরো বলেন, এই ক্র্যাশ প্রোগ্রামটি মার্চের ১ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত চলেছে। কর্পোরেশনের পাঁচটি অঞ্চলের কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

উত্তরের আওতাধীন ৫টি অঞ্চলের পুকুর, লেক ডোবা-নালা পরিষ্কার  করার জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অঞ্চল ভেদে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলোকে পরিষ্কার করার কাজ চলছে।  

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, কিছু দিনের মধ্যে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে স্বস্তি পাবে।

মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে লোকবল কম। আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে ছিল ৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত জলাশয়গুলোর কচুরিপানা, আগাছা, ডোবা-নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ফগার/হুইল/স্প্রেমেশিন পরিবহন ক্রয়ের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।    

গত অর্থবছরের (২০১৩-২০১৪) বাজেটে এ সংস্থায় একই কার্যক্রমের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।