ঢাকা: নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমীন।
ন্যায় বিচারের মাধ্যমে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দূর করে উন্নত বিশ্ব গড়তে বিশ্বের নারীদের এক হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকার রাখার জন্য বিশ্বের ১০ নারীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারীর পুরস্কার’(International Women Courage- আইডব্লিউওসি)-এ ভূষিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
এ পুরস্কারগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশ্বের সব নারীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নাদিয়া শারমীন বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল একাত্তর টিভিতে কর্মরত।
২০১৩ সালে ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৌলবাদী দলটির কর্মীদের হামলায় আহত হন নাদিয়া। সে সময় তিনি একুশে টেলিভিশনের এক প্রতিবেদক হিসেবে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
নাদিয়া শারমীন নারী অধিকার নিয়েও বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
সাংবাদিক নাদিয়া ওয়াশিংটন ডিসিতে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি সারা বিশ্বের নারীদের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, চলুন, এক সঙ্গে এগিয়ে যাই। চলুন, একটি নুতন বিশ্ব তৈরি করি। একটি নতুন বিপ্লব করি। এর মাধ্যমে আমরা একটি উন্নততর বিশ্ব তৈরি করতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, সবার মিলিত শক্তিতে সহিংসতা দূর করে বিশ্বের পরিবর্তন করা যেতে পারে।
২০১৩ সালের ৫ মের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করে নাদিয়া শারমীন বলেন, জীবন দিয়ে হলেও প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো।
অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নারী বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ ক্যাথারিন এম রাসেল ও ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদবিষয়ক হিদার হিঙ্গিংবটম উপস্থিত ছিলেন।
নাদিয়া জানান, মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর তাকে কাজ থেকে বিরত রাখে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। এ সময় তার চিকিৎসার খরচ দিতেও অস্বীকার করে তারা এবং শেষপর্যন্ত তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
নাদিয়া শারমীন ছাড়াও বিশ্বের আরো নয় নারীকে এই সম্মাননা পদক দেওয়া হয়। তারা হলেন- ক্যাপ্টেন নিলুফার রাহমানি (আফগানিস্তান এয়ারফোর্স), বলিভিয়ার রোজা জুলিয়েটা মনটানো সালভেটিয়েরা (প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক- অফিসিনা জুরিডিকা পারা লা ম্যূজের), মায়ানমারের মে সাবে ফিউ (পরিচালক, জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি নেটওয়ার্ক), সেন্ট্রাল আফিকান রিপাবলিকের (সিএআর) বিট্রিস ইপেয়ি (প্রেসিডেন্ট- ফাউন্ডেশন ভোইক্স ড্যু সিউর), গিনির ম্যারি ক্লেয়ারি টিহিকোলা (নার্স- ইবোলামুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা এবং ইবোলা মুক্তকরণের একজন সক্রিয় কর্মী), জাপানের সায়েকা ওসাকাবে (প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিনিধি- মাতাহারা নেট), কসোভোর আরবানা এক্সহারারা (এডিটর-ইন-চিফ- জেরি), পাকিস্তানের তাবাসসুম আদনান (প্রতিষ্ঠাতা- খেন্দো জির্গা) ও সিরিয়ার মাজদ চৌরবাজি (এক্সটার্নাল রিলেশনস ডিরেক্টর- ওমেন নাও ফর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারস)
দ্য ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ২০০৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। এর আগে আরো ৫০টি দেশের ৮৬ জন সাহসী নারীকে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কারে ভূষিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারী সাংবাদিক, অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল নারী নেতা এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠেয় এক সম্মেলনে সারা বিশ্বের নারী অধিকারকর্মীদের সঙ্গেও এরপর সাক্ষাৎ করবেন নাদিয়া শারমীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫