ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইনে এনআইডি সেবা

ওয়েবসাইটে ভুল নির্দেশনা, ভোগান্তির শেষ নেই

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
ওয়েবসাইটে ভুল নির্দেশনা, ভোগান্তির শেষ নেই

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নিয়ে অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) খামখেয়ালিপনার শেষ নেই। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।


 
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলানিউজ পাঠকদের অভিযোগ, অনলাইনে তথ্য সংশোধন বা হালনাগাদের সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েও কোনো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। যেসব নির্দেশনা ‘https://services.nidw.gov.bd/registration’ ওয়েব সাইটটিতে দেওয়া রয়েছে, তাও ভুল। যে কারণে ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পথও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ফলে বিভ্রান্তি আর ভোগান্তির পর স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়েও সমাধান হচ্ছে না।
 
এদিকে অনলাইনে আবেদনের পর কোনো ফলাফল না পাওয়ায়, স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা কোনো নির্দেশনা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাননি এমন কথাও বলা হচ্ছে। এমন নানাবিধ সমস্যা আর গাফিলতির কারণে কোটি কোটি টাকার সফটওয়্যারে চালু করা এ সেবাটি বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
 
বেশ কয়েকজনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ইসির ওই ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সেখানে রেজিস্ট্রার অপশনে পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। যার এক নম্বরে বলা হয়েছে-   প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পূরণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। দুই নম্বরে বলা হয়েছে-আপনার কার্ডের তথ্য ও মোবাইলে প্রাপ্ত অ্যাক্টিভেশন কোড সহকারে লগ ইন করুন। তিন নম্বরে বলা হয়েছে-তথ্য পরিবর্তনের ফর্মে তথ্য হালনাগাদ করে সেটির প্রিন্ট নিয়ে নিন। চার নম্বরে বলা হয়েছে-প্রিন্টকৃত ফর্মে স্বাক্ষর করে সেটির স্ক্যানকৃত কপি অনলাইনে জমা দিন। পাঁচ নম্বরে বলা হয়েছে- তথ্য পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলাদির কালার স্ক্যান কপি অনলাইনে জমা দিন।

কিন্তু চার নম্বর নির্দেশনাটি পূরণের জন্য কোনো অপশন ওয়েব সাইটে রাখা হয়নি। ফলে সেবাগ্রহীতারা দীর্ঘ সময় ব্যয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করলেও স্বাক্ষর করা আবেদনের স্ক্যান কপি অনলাইনে জমা দিতে পারেন না। এ নিয়ে কারো কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পাওয়ার ব্যবস্থাও রাখেনি নির্বাচন কমিশন। বিকল্প না থাকায় সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী তার থানা বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গেলেও এ বিষয়ে কোনো নির্দশনা নেই বলে ফেরত পাঠানো হয়।
 
এদিকে অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে সাধারণ জিজ্ঞাসা নামে একটি অপশন রয়েছে। যেখানে ২২ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে নয় নম্বর প্রশ্নের উত্তরে এনআইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তনের উপায় বলা হয়েছে-নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে। অথচ, ছবি সংশোধনের ক্ষেত্রে সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার কথা।
 
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছবি পরিবর্তনের জন্য যদি ঢাকা যেতে হয়, তাহলে এই অনলাইন সেবার সুবিধা কী?
 
এই অভিযোগ আর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীনের দারস্থ হন এ প্রতিবেদক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়। স্বাক্ষরকৃত আবেদনের স্ক্যান কপি অনলাইনেই আপলোড বা জমা দেওয়ার অপশন থাকার কথা। এছাড়া ছবি পরিবর্তনের জন্য ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। এটা উপজেলাতেই হবে। অনলাইনের ওই দিক নির্দেশনা তবে ভুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত বিষয়টি সমাধান করবো। ’
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, এনআইডি মহাপরিচালক অনলাইন সেবা দেওয়ার ঘোষণার পর হয়তো আর ওয়েবসাইটটি চালু করেই দেখেননি। অন্যথায় এতো ভুল নির্দেশনা কিভাবে ওয়েবসাইটে থাকে? এছাড়া সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও কেন সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় অপশনগুলো রাখা হয়নি এ প্রশ্ন খোদ ইসি কর্মকর্তাদেরও।
 
অনলাইনে ফরম পূরণের পর তা স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে জমা না নেওয়া প্রসঙ্গে এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, অনলাইন সেবা দেওয়ার উপর তিনমাস ট্রেনিং করালাম উপজেলা কর্মকর্তাদের। কোন কোন কর্মকর্তা আদেশ পরিপন্থি এমন কাজ করছেন, তাদের নামগুলো দেন, অ্যাকশানে যাবো। কেননা, অনলাইনে আবেদনের পর তার প্রিন্ট কপি সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অনলাইন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলন করে এর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওইদিন এনআইডি মহাপরিচালক ইসির সভাকক্ষে একটি প্রেজেন্টেশন করেও সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন কিভাবে আবেদন করতে হবে। কিন্তু শুরু থেকে এ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও তা মানতে নারাজ এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক। মঙ্গলবার ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডেকে এনে ভুলের কারণ জানতে চান। এছাড়া দ্রুত সমাধানেরও নির্দেশনা দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।