ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রশ্ন ফাঁসের সাজা চার বছর জেল!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
প্রশ্ন ফাঁসের সাজা চার বছর জেল! ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: দুই বছর আগের একটি খসড়ার পরিমার্জন করে প্রশ্ন ফাঁসে শাস্তির বিধান রেখে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ পরিপন্থী কোন বিষয় পাঠ্যসূচিতে থাকবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে আইনের খসড়ায়।

আইনে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করলে জড়িতদের সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের সাজাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচিত খসড়াটি শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে।

আইনের খসড়ায় ৬৭ ধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তিনি সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এছাড়া গাইড বই পড়ানো, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা, পাঠ্যসূচি পাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়, এনসিটিবি থেকে পাণ্ডুলিপি অনুমোদন নেয়া সাপেক্ষে কোনো প্রকাশক বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সহায়ক শিক্ষা উপকরণ কিংবা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবে। তবে কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না। আইনটি লঙ্ঘন করলে লঙ্ঘনকারীর সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়।

খসড়ায় ইংরেজি মাধ্যমসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়।

অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে আইনের খসড়ায়।

খসড়া আইনে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম ও এবতেদায়ী মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কর্তৃপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করার বিধান রাখা হয়।

মাধ্যমিক স্তরে সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যম বা বিদেশি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি কোন শাখাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন নেয়ার কথা বলা হয়।
 
অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আইনে আরও বলা হয়, এনসিটিবি প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করবে। এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া অতিরিক্ত বই অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির পরিপন্থী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে উল্লেখ করে বলা হয়, তা লঙ্ঘন করা হলে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বিদেশি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাদান অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা এবং ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল বা সমপর্যায়ে সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা ও বাংলাদেশ স্ট্যাডিজ বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তিন লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে ‘ব্যবস্থাপনা কমিটি’ ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘অভিভাবক-শিক্ষক পরিষদ’ নামে পর্ষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য প্রাথমিক স্তরে ‘শিক্ষার্থী পরিষদ’ গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়।

২০১৩ সালের শিক্ষা আইনের খসড়াটি একবার রচিত হলেও তা আর চূড়ান্ত করা হয়নি হয়নি। ‘শিক্ষা আইন-২০১৫’ নামে খসড়াটি এখন মতামত গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত খসড়ার বিষয়ে ই-মেইলে (info@moedu.gov.bd এবং law_officer@moedu.gov.bd) মতামত দেওয়া যাবে।

‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র সুপারিশের আলোকে এই খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শিক্ষাবিদদের মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
এমআইএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।