বকশীগঞ্জ (জামালপুর) থেকে: ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা গ্রাম পাথরেরচর। বুনো হাতির আক্রমণে এরই মধ্যে একটি বাড়ির অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে।
গ্রামের আঁকাবাকা পথ ধরে মাটির রাস্তায় এক কিলোমিটার অতিক্রম করলেই পাকা সড়কের পাশে পাথরেরচর বাজার। বাজার বসে প্রতিনদিনই, তবে শনি ও মঙ্গল হাটবার।
এক হালি সবরি কলা নিলো মাত্র ১০ টাকা। খেতে খেতে কথা হয় বিক্রেতার সঙ্গে। রাস্তার ওপাশেই তাদের বাড়ি। করিম নামে ওই কলা বিক্রেতা জানালেন, দেওয়ানগঞ্জ থেকে এই কলা কিনেছেন তিনি ৩ দিন আগে। এখনো সব বিক্রি হয়নি। তবে হাটের দিনে সব বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
বাড়ি থেকে জলপাই একটি গাবলায় করে নিয়ে এসেছেন বৃদ্ধ ফয়েজ মিয়া। পাকা জলপাই ফালি করে কেটে ভেতরে লবণ এবং হলুদ দিয়ে সুস্বাদু করার চেষ্টা ছিল। তবে ঘণ্টাখানেক হয়ে গেলেও একটি জলপাইও বিক্রি হতে দেখলাম না। উল্টো এক যুবক কথা বলতে বলতে একটি জলপাই তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো। বিড়বিড় করে গাল দিতে থাকলেন বৃদ্ধ।
তালের মিছরি গলিয়ে তার ওপর বাদাম দিয়ে এক ধরনের খাবার। এরসঙ্গে বাদাম, বুট, বিক্রি হচ্ছে রাস্তার পাশে। মাছি ভনভন করে উড়ছে তালমিছরির ওপর। ৫ টাকায় আমাদের ঢাকার পরিমাণে ২০ টাকার বাদাম দিলেন এই বিক্রেতা।
একটি দোকানের সামনে গুটি-শুটি হয়ে বাড়ি থেকে আতপ চাল নিয়ে এসে বসেছেন দুই মুরুব্বি। রইসউদ্দিন জানালেন, বাড়ির ধানের চাল। প্রায় ১০ কেজি চাল নিয়ে এসেছেন এক একজন।
মাছের বাজারে পাংগাসের দাপটই বেশি। জিজ্ঞাসা পরার পর বিক্রেতারা বললেন, দেওয়ানগঞ্জের ফার্মের মাছ এগুলো। এছাড়াও পাশের জিঞ্জিরাম নদীর মাছও নিয়ে এসেছেন জেলেরা। নদীর মাছের দাম কিছুটা বেশি। বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়পক্ষই বললেন, দুনিয়ার যে কোন নদীর চেয়ে এ নদীর মাছের স্বাদ একটু বেশি বেশি।
বাজারের ভেতরে পান-সুপারি-জর্দার দোকান। খুচরা দোকানদাররা মঙ্গলবার এখান থেকে প্রয়োজনীয় পান সুপারি কিনে নিয়ে যান। মুরাদ নামে পানের দোকানদার কাটা সুপারি প্যাকেট করতে ব্যস্ত। জানালেন, প্রতি প্যাকেটে ৫০ গ্রাম সুপারির মূল্য ২০ টাকা করে।
সবজির মধ্যে শাকের দোকানই বেশি। লাল শাক, পুই শাক, লাউ শাক, কচু শাক সবই রয়েছে। বেশিরভাগই বাড়ি থেকে আনা। আর দাম আঁটি অনুযায়ী ৫ টাকা থেকে শুরু।
গরুর দুধ নিয়ে এসেছেন অনেকে ডেকচিতে করে। উপরে কচুরিপানা ভাসছে।
পশ্চিমে সূর্য পড়তে থাকলে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। গমগম করে ওঠে বাজার। সেলুনগুলোতে বাড়তে থাকে ভিড়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কয়েকজন সদস্য টহল দিচ্ছে সীমান্তবর্তী এ বাজারে। আবার নিজেরাও সেরে নিচ্ছেন টুকটাক কেনাকাটা।
পাথরেরচরের বড় বাড়ি থেকে বাজার করতে এসেছেন দুলাল মিয়া। কার্ফু মাছ, ২৫০ গ্রাম সয়াবিন তেল, ২৫০ গ্রাম কেরোসিন, একটি লাউ কিনেছেন তিনি।
বললেন, হাটের দিনেই বেশি কেনাকাটা হয়। অন্যদিন জমিতে কৃষিকাজেই সময় কাটে বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
এমএন/জেডএম