ঢাকা: খাবার পানি, গোসল, ধোয়া-মোছার জন্য রাজধানীবাসীর কাছে ওয়াসার (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ) পানির বিকল্প নেই। অথচ এই ওয়াসার পানির লাইন থেকেই বের হচ্ছে মানুষের মল-মূত্র!
সপ্তাহখানেক ধরে এমন ভয়ানক বিপদের মুখে রয়েছেন রাজধানীর মিরপুরের ইব্রাহীমপুর বাজার এলাকার হার্ট লাইন গলির ২২টি বাড়ির বাসিন্দারা।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরতে যায় বাংলানিউজ। এসময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়াসার পানির লাইনে মানুষের মল-মূত্র আসছে বিধায় বাড়িওয়ালারা ট্যাংক পরিষ্কার করতে বাড়তি টাকা খরচ করছেন।
হার্ট লাইন গলির ৯১০/২ নম্বর বাড়ি মালিক মুন্না বলেন, ‘সাত দিন ধরে ময়লা পানি আসতাছে। দুই দিন আগে টেংকি পরিষ্কার করছি। আইজ আবার করতে হইতাছে। ’
মুন্না জানান, হার্ট লাইন গলিতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি রয়েছে। তবে ২২টি বাড়ির পানির লাইনে সরাসরি মানুষের মল-মূত্র বের হচ্ছে।
তিনি বলেন,‘ছয় দিন প্রায় নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়া পানির সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতাছি’।
মুন্নার মতো আরও ৫-৬ জন বাড়ির মালিক বলেন, ‘আমরা সবাই সংশ্লিষ্ট অভিযোগ কেন্দ্রে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কোনোই সমাধান হচ্ছে না। ’
ওই গলির ৯১১/১ নম্বর বাড়ির মালিক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকার পানি কিনে খেতে হচ্ছে। সমস্যা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে ওয়াসার পাম্প থেকে ভ্যানযোগে পানি আনতাম। কিন্তু চার দিন ধরে ওয়াসা আমাদের পানি দিচ্ছে না। ’
৮৫৯ নম্বর মিয়া বাড়ির মালিক হুমায়ুন কবির আক্ষেপ করে বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে ট্যাংক পরিষ্কার করেছি, কত বার ট্যাংক পরিষ্কার করবো। সকালে পরিষ্কার পানি এলে বিকেলে ঘোলা পানি আসে। আর ঘোলা পানির সঙ্গে মানুষের মল ভাসছে। ’
তিনি বলেন, ‘ময়লা পানি আসা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ট্যাংকি পরিষ্কার করবে না একাধিক বাড়িওয়ালা। তারা ফিটকারি আর ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি পরিষ্কার করে ব্যবহার করছেন। তবে এর ফলে চর্ম রোগে আক্রান্ত হওয়ার শংকা খুব বেশি তাও জানেন তারা। ’
মুন্না-বেলায়েত-হুমায়ুনরা বলেন, একবার ট্যাংক পরিষ্কার করতে দুই হাজার টাকা খরচ হয়। তারপর ট্যাংকের পানি ফেলার জায়গা নিয়েও সমস্যা। আর ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য মানুষ পাওয়াও দায়।
তারা জানান, গত সপ্তাহে হার্ট লাইন গলিতে ওয়াসার পানি সাপ্লাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর সমস্যা দেখা দিলে ছয় দিন আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অভিযোগ কেন্দ্রে কথা বলে আসেন তারা।
তাদের অভিযোগের পর শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টায় এডিপি থেকে তিন জন শ্রমিক এসে রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু করেন।
সেখানে কায়সার নামে এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এডিপি থেকে ফোনে বলা হয়েছে এ গলির পানির লাইন থেকে ময়লা বের হচ্ছে। কী কারণে বের হচ্ছে তা দেখতে আমরা এসেছি। '
যাদের লাইনে ময়লা পানি আসছে, তাদের কেন ওয়াসার বাইরের লাইন থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকার ওয়াসার পাম্প অপারেটর মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে, তাই পানির লেয়ার নিচে চলে যাচ্ছে। এতে পানির প্রেসার কমে যাচ্ছে। তাই লাইনে পানি সাপ্লাই দিতে সমস্যা হচ্ছে। ’
তিনি জানান, ওই এলাকায় ওয়াসার দু’টি পাম্প মিলিয়ে প্রতি মিনিটে ১২’শ লিটার পানি তোলা হতো। তবে সপ্তাহ ধরে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় ৭’শ লিটার পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান মোল্লার সঙ্গে কথা বললে তিনি বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, তার এলাকায় পানির কোনো সমস্যা নেই। ওয়াসা ভালভাবেই কাজ করছে। এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে তাকে জানালে ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, এর আগেও কয়েক জায়গায় পানির সমস্যা হয়েছে। এডিপি এসে তার সমাধান করেছে। এখন যে সমস্যা হচ্ছে, তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এডিপির সহায়তায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এফবি/এইচএ/আরআই