ঢাকা: বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) একক কর্তৃত্ব দেওয়ার সার্কুলার বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামছে প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক (প্রকৃচি) ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) সমন্বয় কমিটি।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কমিটির সমাবেশে দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমস্যার সমাধানে তার হস্তক্ষেপ কামনা; ২৮ অক্টোবর সকল উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয়ভাবে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি; বেতনভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পূর্বের নিয়ম অনুসরণের ব্যবস্থা নেওয়া; ৫ নভেম্বর উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ; ৫ নভেম্বরের মধ্যে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা।
সমাবেশে জানানো হয়, ৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে বলা হয়, বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) একক কর্তৃত্ব দেওয়ার সার্কুলার বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে সচিব/ সিনিয়র সচিব পর্যন্ত সকল পর্যায়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে কৃত্য পেশাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সকল ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসে পদোন্নতির সমান সুযোগ প্রদান, নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিস বহির্ভূত সকল ধরনের প্রেষণও বাতিল করতে হবে।
সমাবেশে আরও বলা হয়, ঘোষিত বেতন স্কেলে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া সকল ক্যাডার ও সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী মর্যাদা ও আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ প্রশাসন ক্যাডারের নিজস্ব পদ- সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, কমিশনার ইত্যাদি পদে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয় না। বিধিবহির্ভূত ও অনৈতিকভাবে এবং অবস্থানগত সুবিধার অপব্যবহার করে তাদের সরকারের বিশেষ পদ- উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদ না থাকার অজুহাতে বছরের পর বছর একই পদে ফেলে রাখা হয়।
এছাড়া, উপজেলা পরিষদের জন্য জারি করা সার্কুলারের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ের সেলফড্রয়িং অফিসারদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ইউএনও নিজেও উপজেলা পরিষদে একজন ন্যস্ত কর্মকর্তা। অথচ পরিষদকে কার্যকর করার নামে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ে ইউএনওকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ইউএনও একমাত্র কর্মকর্তা যার উপজেলা পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেই। উপজেলাকে কার্যকর করতে ইউএনও’র কর্তৃত্ব বাতিল ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতায়ন করতে হবে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটিভুক্ত কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বেতন স্কেল থেকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়া এবং উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার নামে ইউএনওকে একক কর্তৃত্ব প্রদানের মত সার্কুলার জারি চলমান স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার ‘আমলাতান্ত্রিক চক্রান্ত’ বলেও অভিহিত করা হয় সমাবেশে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির কমিটির আহ্বায়ক ও কৃষিবিদ ইনস্টটিউটের সভাপতি সংসদ সদস্য (এমপি) আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে। যেসব আমলা সরকারকে বিভ্রান্ত করছে, কর্মকর্তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্তকারীরা আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য করছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, অবশ্যই সফল হবো।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও বিসিএস সমন্বয় কমিটির সভাপতি কবির আহমেদ ভূইয়া, প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মো. ফিরোজ খান, বিএমএ’র মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের মহাসচিব মো. মোবারক আলী, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সবুর, সমন্বয় কমিটির প্রচার সম্পাদক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, ডা. হাবিব-ই-মিল্লাত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, শিক্ষা ক্যাডারের সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম, কৃষি ক্যাডারের সভাপতি তাসাদ্দেক আহমেদ, সড়ক ও জনপথ ক্যাডারের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, কৃষি ক্যাডারের মহাসচিব খায়রুল আলম প্রিন্স, স্বাস্থ্য ক্যাডারের সভাপতি ডা. সেলিম রেজা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সম্মিলিত কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. শফিউল আজম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময় : ২০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এসএম/এইচএ