মাগুরা: কাজ করতে না পারার অজুহাত দিয়ে কখনো শরীরে ঢালা হতো গরম পানি। কখনো ছুরি বা বটির পোঁচ দিয়ে করা হতো জখম।
এভাবে মুখ বুজে দীর্ঘ ১৫ মাস থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ঢাকার রকিবুল ইসলাম হিরো নামে এক যুগ্ম জেলা দায়রা জজের বাসার বন্দিদশা থেকে পালিয়ে মাগুরায় নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে ১২ বছরের শিশু গৃহকর্মী খাদিজা।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে পরিবারের সদস্যরা খাদিজাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
অভিযুক্ত গৃহকর্তা রকিবুল ইসলাম মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
আহত খাদিজার মা মাগুরার শালিখা উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ডালিম বেগম বাংলানিউজকে জানান, অভাব-অনটনের কারণে দেড় বছর আগে খাদিজাকে গ্রাম্য প্রতিবেশী আবুল বাশারের মাধ্যমে ঢাকায় রকিবুল ইসলাম নামে এক জজের বাসায় মাসিক এক হাজার টাকা চুক্তিতে কাজে দেন।
কিন্তু এরপর থেকে মেয়ের সঙ্গে তিনি নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ৫/৬ মাস পর প্রতিবেশী আবুল বাশারের মাধ্যমে একবার মোবাইল ফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
শনিবার ভোরে অসুস্থ অবস্থায় খাদিজা পালিয়ে বাড়ি আসে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি মেয়ের ওপর এ নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে খাদিজা জানায়, রকিবুলের উত্তরার বিশাল বাসায় তাকে রান্না ছাড়া সব ধরণের কাজ করতে হতো। তুচ্ছ অজুহাতে প্রায়ই তাকে চড়, থাপ্পর, শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাকা ও গরম পানি ঢেলে দিতেন রকিবুলের স্ত্রী সুমি। রকিবুলও কয়েকদিন তাকে মারধর করেছেন। দিনে একবার বাসি খাবার দেওয়া হতো খাদিজাকে।
সর্বশেষ প্রায় দুই মাস আগে খাদিজার হাতের কনুইয়ের পাশে বটি দিয়ে ও তার কয়দিন পরে ধারালো ছুরি দিয়ে পুচিয়ে জখম করেন রকিবুলের স্ত্রী সুমি।
খাদিজা জানায়, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে শুক্রবার দুপুরে বাসার গার্ডকে পাউরুটি কিনতে পাঠিয়ে কৌশলে পালিয়ে বাইরে আসে সে। এরপর হেঁটে সাভারে আসে সে। সেখানে এক পুলিশ সদস্য তাকে একশ টাকা দিলে তা দিয়ে রাতের বাসে উঠে মাগুরার বাড়িতে ফিরে আসে খাদিজা।
মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাইমানুল হক বলেন, খাদিজার শরীরের ওল্ড ইনজুরি আছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা দেখে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি আছাদুজ্জামান বলেন, শিশুটির শরীরের পুরাতন নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রকিবুল ইসলাম হিরোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এসআর