ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

এখনও চলছে ঐতিহ্যের ঘোড়ার গাড়ি

রিফাত রাজ, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এখনও চলছে ঐতিহ্যের ঘোড়ার গাড়ি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): রাজকীয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি। যা স্থানীয়ভাবে টমটম নামেও পরিচিত।

সময়ের ব্যবধানে বাংলার ঐতিহ্যের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে বাহনটি।

ইতিহাস বলছে, ভারত বর্ষে ইংরেজ শাসন‍ামলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হয়। আর ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হয় ১৮৩০ সালে।

এক সময় তা গ্রাম-গঞ্জের মানুষের অতি প্রয়োজনীয় বাহনে পরিণত হয়। কিন্তু যান্ত্রিকতার এ যুগে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই যান।

ঢাকার রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের সুবিধার্ধে সংস্কার করা হয় সড়ক কিংবা অলি-গলি। বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল এই রাজসিক যানটি।

ইট-পাথর আর যান্ত্রিকতার শহর ঢাকা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে চোখে পরে শুধু রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, লক্কর-ঝক্কর বাস, মিনিবাস কিংবা মালবাহী ট্রাক।

এরপরও রাজধানীতে টিকে আছে পুর‍ানো ঐতিহ্যবাহী সেই টমটম ‘ঘোড়ার গাড়ি’।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অতীতে রণাঙ্গনের রসদ সরবরাহের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। এমনকি রাজা-বাদশা পরবর্তীতে জমিদাররা এই বাহনে চড়েই বের হতেন নানা কাজে।

এখনও পুরান ঢাকার সদরঘাট-গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহনের ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি।

বর্তমানে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও বিয়ে ও পূজায় ঐতিহ্যবাহী টমটমের ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন দিবসের শোভাযাত্রা কিংবা চলচ্চিত্রের শুটিংয়েও ব্যবহৃত হয় যানটি।

সংশ্লিষ্টরা জান‍ান, বিয়ে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ঘোড়ার গাড়িকে বেশ সুন্দরভাবে সাজানো হয়। বিশেষ ধরনের আলখাল্লা পড়েন গাড়োয়ান ও তার সহকারীরাও।

ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া যেন পুরান ঢাকার বিয়েই অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে জানান স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা।

কোচোয়ান বা গাড়োয়ানদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

দিনভর যাত্রী-আনা নেওয়া করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তারা।

বর্তমানে বঙ্গবাজার, লক্ষ্মীবাজার, আজিমপুর, বকশীবাজার, নারিন্দা, সিদ্দিকবাজার, কেরাণীগঞ্জে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করছে।

কবির হোসেন নামে এক কোচোয়ান জানান, নিত্যদিন যাত্রী বহন ছাড়াও এই গাড়ির কদরের শেষ নেই। বিশেষ করে বিয়েসহ যেকোনো সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক শোভাযাত্রাতেও ঘোড়ার গাড়ির ডাক পড়ে। আর এভাবেই বেঁচে আছে কয়েক পুরুষ ধরে চলে আসা টমটম ‘ব্যবসা’।

‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অনেক সময় ডাক আসে’ কবিরের সঙ্গে সুর মেলালেন আরেক কোচোয়ান সবুজ।

এদিকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ভ্রমণ যাত্রীদেরও বেশ আনন্দ দেয় বলে জানালেন তারা।

রবিউল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মকে ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে অনেকে ঘোড়ার গাড়ি দেখাতে কিংবা চড়েন। তাছাড়া আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির একটি আভিজাত্যেরও প্রতীক ঘোড়ার গাড়ি। ’

সাধারণত এক জোড়া ঘোড়া দিয়ে চলে টমটম। তবে অনেক সময় গাড়ি টানতে একটি ঘোড়াও ব্যবহার করা হয়। চার চাকার গাড়ির সামনে, মাঝে ও পেছনে মোট ১৪ জন যাত্রী বসেন। সঙ্গে রয়েছে কোচোয়ান ও তার সহকারীর আসনও।

কোচোয়ানরা জানান, লোহা ও স্টিলের তৈরি দুই ধরনের ঘোড়ার টমটম রয়েছে পুরান ঢাকায়। একটি গাড়ি তৈরি করতে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়।

‘একটি ভালোমানের অর্থাৎ শক্তিশালী ঘোড়া কিনতেও লাখ টাকা লাগে। সব মিলিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়ির জন্য দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়,’ বলেন তিনি।

এদিকে পিচের রাস্তায় টক টক করে চলতে গিয়ে অনেক সময় ঘোড়ার পায়ের খুর ক্ষয়ে যায়। এ জন্য কুরে নাল (লোহার এক ধরনের খাপ) পরাতে হয়।

আর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘোড়ার নাকে রশি পরানো হয় বলে জানান কোচোয়ানরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।