ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে গত ১৯ অক্টোবর ভর্তি হন মহানগরীর নওমহল মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুরুন্নাহার ববি (৩৫)। ওইদিন রাতেই তার অস্ত্রোপচার করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও সহকারী রেজিস্ট্রার কানিজ ফাতেমা জান্নাত।
ববির কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। তাকে স্থানান্তরিত করা হয় হাসপাতালের তিন তলার চার নম্বর কেবিনে। কিন্তু কেবিনে এসেই পেটের ভেতর প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকেন এ শিক্ষিকা। বেলুনের মতো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় তার পেট।
সংশ্লিষ্ট সেবিকাদের এ নিয়ে বললে তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি শনাক্ত করেন রোগীর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। রোগীকে পরামর্শ দেন বেশি করে হাঁটার। কিন্তু ২১ অক্টোবর রোগীর অবস্থার আরো অবনতি হলে এবার কেবিনে আসেন দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক।
তারা রোগীর স্বজনদের আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। তাদের কথামতো আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে ধরা পড়ে, রোগীর পেটের ভেতর ৬ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার আকারের সাদা এক ধরনের বস্তু (রোগীর স্বজনদের মতে গজের বাক্স)। এটি ভেতরে রেখেই অস্ত্রোপচার করার কারণেই এমন সংকটাপন্ন অবস্থা হয়েছে রোগীর।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতি ও চরম দায়িত্ব অবহেলার এমন নজির হাসপাতালের গণ্ডি পেরিয়ে এক কান দু’কান করে জানাজানি হয়ে গেলে গোটা শহরে শুরু হয় তোলপাড়।
রোববার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে রোগীর স্বামী আহসান কবির ও রোগীর খালা আসমা আক্তার বাংলানিউজের কাছে এভাবেই তুলে ধরেন এ ঘটনার সারসংক্ষেপ।
দুঃসহ এ ঘটনার কথা মনে করতেই চোখের দু’কোণ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে স্কুল শিক্ষিকা নুরুন্নাহার ববির।
হাসপাতালের ৪ নম্বর কেবিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্বামী আহসান কবির বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করার পর আমার স্ত্রীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। পেটের ভেতর গজের বাক্স (মুভস) রেখেই অপারেশন শেষ করার এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের গাফিলতি।
সরকারি হাসপাতালেই যদি এমনটি ঘটে, তবে গরিব সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন, প্রশ্ন রাখেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রাইভেট ক্লিনিকে অপারেশন করলে আমার সাকুল্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হতো।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের এমন কাণ্ডের খেসারত হিসেবে আমাকে এখন পর্যন্ত গুণতে হয়েছে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা। আমার স্ত্রীকে ওই চিকিৎসক মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছিলেন। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
চিকিৎসাধীন নুরুন্নাহার ববির বাবা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক নুরুল হক নুরু। আর মা মহিলা সমিতি উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার। ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে তারা বিষয়টি অবহিত করলে তিনি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে দ্বিতীয় দফা গত ২২ অক্টোবর অস্ত্রোপচার হয় নুরুন্নাহার ববির। এখন তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানান কেবিনে আসা এক চিকিৎসক।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কানিজ ফাতেমা জান্নাত অবশ্য দাবি করে বলেন, অস্ত্রোপচারে আমার সঙ্গে সিনিয়র চিকিৎসকরাও ছিলেন। ওই রোগীর পেটে পুঁজ আর জমাট রক্ত ছিল। এ কারণেই পেট ফুলে গিয়েছিল। কোনো গজের বাক্স ছিল না। পরে দ্বিতীয় দফা অপারেশনের পর রোগী সুস্থ রয়েছেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যান রিপোর্টেও এ রকম কথাই বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এমএএম/জেডএস/এএসআর