ঢাকা: ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটাদের নাম কর্তনে এবার ইউনিয়ন পরিষদের দ্বারস্থ হলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশের সহায়তায় এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, মৃত ভোটারের নাম কর্তনে দুটি পন্থায় কাজ করতো নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আবেদনের মাধ্যমেও মৃত ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতো।
কিন্তু বেশ ক’বছর ধরে বারবার আহ্বান জানিয়েও নাগরিকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সহায়তা পায়নি ইসি। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে অসহযোগিতার হার সবচেয়ে বেশি।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, আমরা তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে স্থানীয় স্কুল শিক্ষকদের নিয়োগ করেছি। কিন্তু তারা বেশিভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ি বাড়ি যেতে চান না। বা গেলেও ফেরত আসেন। অনেক সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে বিভিন্ন বাসায় ঢুকতেও নাগরিকরা বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেন তথ্য সংগ্রকারীদের।
ফলে সামান্য কিছু সম্মানী নিয়ে কোনো শিক্ষকই অপদস্ত হতে চান না। অথচ ভোটার হওয়া বা মৃত ভোটারের নাম কর্তন করার ক্ষেত্রে নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। ইসি বাড়িবাড়ি লোক পাঠাচ্ছে অথচ নাগরিকদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, গ্রামের চিত্র কিছুটা ইতিবাচক। সেখানে সবাই সবাইকে চেনে বলে তেমন একটা সমস্যা হয় না। তবে গ্রামেও অনেক সময় তথ্যসংগ্রহকারীরা বাড়িবাড়ি যান না। কিন্তু এ নিয়ে কিছু বলারও উপায় নেই। কেননা, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখার এতো লোকবল ইসির নেই।
এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ বা শহরের মানুষ সবচেয়ে বেশি সচেতন। অথচ তারাই বেশি অসহযোগিতা করছেন। সরকারের উচ্চপদস্থরাও এ তালিকায় রয়েছেন। আমরা বাড়িতে সেবা নিয়ে যাচ্ছি। তারপরও তারা সহযোগিতা করছেন না। তাই বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, এ বছর হালনাগাদের কাজ এখনও চলছে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহের সময় ৬ লাখ ১০ হাজার মৃত ভোটার পাওয়া গেছে। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মৃত নাগরিকের সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখের মতো।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের অবস্থা খুব খারাপ। দেশের অন্যান্যস্থানে মৃত ভোটারের সংখ্যা ৩ শতাংশের বেশি হলেও ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এর হার ১ শতাংশের কম।
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মৃত ভোটার কর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবার ‘ইনোভেটিভ’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
সূত্র জানায়, রোববার (২৫ অক্টোবর) এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন।
ইসির উপ-সচিব আবদুল অদুদ স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা ইউনিয়ন ভিত্তিক মৃত ভোটারের তালিকার সত্যায়িত কপি ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠাবেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা ওই তালিকার কপি চৌকিদার বা গ্রাম পুলিশকে দেবেন। তারা ওই তালিকা দেখে নিশ্চিত করবেন কোনো মৃত ভোটার তালিকাভুক্ত হয়নি।
এরপর একটি নির্দিষ্ট ছকে বিষয়টি পূরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করবেন। চেয়ারম্যানরা সেই নামগুলো যাচাই করে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন। এরপর তার একটি কপি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবেন। এক্ষেত্রে নাম কর্তনের বিবেচ্য মৃত ভোটার সংখ্যার ১০ গুণ হারে সম্মানী পাবেন চৌকিদার বা গ্রাম পুলিশরা।
এ প্রক্রিয়া সারা বছর চলমান থাকবে। অর্থাৎ মৃত ভোটার কর্তনের বিষয়টি অধিকরতর নিশ্চিত হবে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছেন প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ। চলমান হালনাগাদ শেষ হলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। সে হিসাবে আগামী বছর দেশের ভোটার ১০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে প্রায় ১০ লাখের মত মৃত ভোটারের নামও তালিকা থেকে কর্তন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
ইইউডি/এটি