ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গর্ভনরের কাছে সমস্যা তুলে ধরলেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী

শাহেদ ইরশাদ ও রাজিউর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
গর্ভনরের কাছে সমস্যা তুলে ধরলেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দহলা খাগড়াবাড়ি দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়): পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সদ্যবিলুপ্ত ছিটমহল দহলা খাগড়বাড়ি বাসিন্দারা ব্যাংকের সিএসআরের আওতায় শিক্ষাবৃত্তি, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জোন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমানের কাছে।

বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি মঈনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আমরা আইনি জটিলতার কারণে সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলাম।

আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর সিএসআরের অর্থ দিয়ে একটি কৃষি জোন করে দিলে কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

দহলা খাগড়বাড়ির বাসিন্দা আফতাবুর রহমান আফতাব বলেন, এখানকার নাগরিকদের উন্নয়নে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও একটি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করা প্রয়োজন। আর্থ সামাজিক জীবনমানের উন্নয়নে ব্যাংকিং সুবিধা ও শিল্পকারখানা স্থাপন করাও খুবই জরুরি।

মোকলেছুর রহমান বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকা থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব ৫-৭ কিলোমিটার। বেহাল সরু রাস্তায় কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে আর্থিক ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে রোববার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দহলা খাগড়বাড়ি লুতফর রহমান স্কুল মাঠে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী দীর্ঘদিন ধরে শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত। ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা ছিল তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়  গত ১ আগস্ট ছিটমহলবাসীদের দুঃসহ জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১১১টি পূর্বতন ছিটমহল লাল-সবুজ পতাকা শোভিত বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্বতন ছিটমহলগুলোতে সম্ভাবনার এক নব দিগন্ত খুলে গেছে।

ব্যাংকগুলো দহলা খাগড়বাড়ির উন্নয়নে আড়াই কোটি টাকা ঋণ এবং সিএসআরের মাধ্যমে ৪২ লাখ টাকা বিতরণ করবে বলেও জানান গভর্নর।
 
আতিউর রহমান বলেন, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসাম্য, বঞ্চনা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট অভিঘাত হ্রাসকরণের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রকে মূল ব্যাংকিং ধারার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক  লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এহসানুল হক, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বদিউল আলম, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবজের,  ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জিল্লুর রহমান, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসনাত জামান চৌধুরী জজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম নুরুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর অফিসের জেনারেল ম্যানেজার খোরশেদ আলম।

এর আগে সিএসআর কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে দহলা খাগড়াবাড়িতে দিনব্যাপী ব্যাংক মেলার বিভিন্ন স্টলে তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন গভর্নর। এ সময় তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ শাখা এবং লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী শাখা উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কর্মসূচির আওতায় দেশের ৪৫টি ব্যাংক ওই এলাকায় ৩৩৪টি নলকূপ, ১৯২টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ১০টি স্প্রে মেশিন, বিপুল পরিমাণ ওষুধ এবং শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়নে ১৯টি কম্পিউটার, ১৩০০টি স্কুলব্যাগ, ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ১০০টি স্কুল বেঞ্চ, আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৯০টি সেলাই মেশিন, ১৮৩টি বাইসাইকেল, ১১০টি ভ্যানগাড়ি, ১৪৬ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০টি গরু, দরিদ্র মানুষের শীত নিবারণে জন্য ৫১০০টি কম্বল বিতরণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।