ঢাকা: রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ।
মশার উপদ্রব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মশক নিধন কার্যক্রমের খোঁজ নিতে ২, ২৬, ৪০, ৪১ ও ৫৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয়।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাদের এ অভিযোগ অনেক কাউন্সিলর স্বীকার করলেও দায় নিতে চাননি ডিএসসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
৪০নং ওয়ার্ডের ১০৭ শরৎ গুপ্ত রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির পেছনে পুকুর থাকায় আমাদের এখানে সব সময় মশার উপদ্রব থাকে। গত দু’মাসে তা আরো বেড়েছে। রাতে তো আছেই, দিনেও মশার যন্ত্রণায় ঘরে টেকা যায় না। গত ৫-৬ বছরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার স্প্রে করতেও দেখেননি ষাটোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ।
অভিযোগ স্বীকার করে কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম খান টিপু বাংলানিউজকে বলেন, মশার ওষুধ মাঝে মধ্যে দিচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছি না। আমার শক্তিও নেই। মাত্র দু’টি মেশিন আছে। তাও নিয়মিত না। ওয়ার্ডের এক মাথায় দিলে অপর মাথায় হয় না। তেলের চাহিদা দিলেও পাই না।
একই অবস্থা ৫৬নং ওয়ার্ডের। সেখানকার এক চা দোকানদার বাংলানিউজকে বলেন, সিটি নির্বাচনের পর আমাদের এলাকায় একবার, বেশি হলে দু’বার মশার ওষুধ দিতে দেখেছি।
কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মশার ওষুধ প্রতিদিন দেওয়া হয় না। গত পাঁচ মাসে ২/৩ বার দিতে পেরেছি। তাও বিশেষভাবে জোন অফিস থেকে ৮/৯টা মেশিন এনে দেওয়া হয়েছে।
২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে ৩টা মেশিন আছে। এগুলো দিয়ে মশার ওষুধ দেওয়া হয়।
প্রতিমাসে অন্তত দু’বার বিশেষভাবে মশার ওষুধ দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন এ কাউন্সিলর।
সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে মশা নিধনের ওষুধ দেওয়ার কথা রয়েছে।
মশা নিধনে ডিএসসিসি’র উদাসীনতার কথা অস্বীকার করে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ ঠিক মতো হয় না, কেউ এটা বললে ভুল বলেছেন।
আমরা দু’ভাবে (অ্যাডাল্টিসাইড, লার্ভিসাইড) মশার ওষুধ দিয়ে থাকি। সকালে ড্রেনের ময়লা পানির সঙ্গে লিক্যুইড আকারে, সন্ধ্যার পর ধোঁয়ার মাধ্যমে। আমাদের ডিএসসিসি’তে ২৭৯ জন কর্মচারী মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আমি নিজেও স্পটে গিয়ে তাদের কাজের তদারকি করি।
কোথাও ঘাটতি থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বস্থ করেন তিনি। মাহবুব হোসেন বলেন, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এখনো আমাদের রাজস্বের আওতায় আসেনি। সেখানে আমাদের কোনো কার্যক্রমই পুরোপুরি চালু হয়নি। তারপরও আমি অন্য ওয়ার্ড থেকে মেশিন নিয়ে সেখানকার মশা নিধনের চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি’র বাজেট সাড়ে ১২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ বাজেট ছিল ১১ কোটি টাকা।
মশার কারণে ম্যালেরিয়া রোগ হয়, বিষয়টি সবারই জানা। এতে প্রাণহানির খবরও আছে। সম্প্রতি মশাবাহিত আরও দু’টি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে বাংলাদেশে। একটির নাম চিকুনগুনিয়া, অন্যটি জাপানিজ এনসেফালাইটিজ বা জেই।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ২০৭ জনের রক্তে এ রোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
ঘনবসতিপূর্ণ, জলজট ও ময়লার বাজার সদৃশ রাজধানীতে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের এ কার্যক্রম মোটেও যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বাসিন্দারা। মশা নিধনে জনবল বৃদ্ধি, তেল ও যন্ত্রপাতির বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
এসইউজে/জেডএস/এএসআর