ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পাহারাদারের পাহারায় কে?

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
পাহারাদারের পাহারায় কে? ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রযুক্তির কল্যাণে নাগরিক সুবিধা বেড়েছে আগেই। এর সঙ্গে এসেছে নিরাপত্তার প্রশ্ন।

তাই সরকারি-বেসরকারি সব সেবাদাতা কর্তৃপক্ষই এখন নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি জোর দেয়। এতে একদিকে যেমন সেবাগ্রহীতার আস্থা বাড়ে, অন্যদিকে পণ্যের চাহিদা ও মূল্য -দুটোই বাড়ে।
 
নিরাপত্তাও আবার বিভিন্ন ধরণের হয়। কোনোটি প্রযুক্তি নির্ভর, কোনটি আবার প্রহরী নির্ভর। কিন্তু এই প্রহরীদের নিয়োগের পর কোনো মনিটরিং যে করা হয় না, তা যে কোনো রাতে ঢাকার রাস্তায় বেরোলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
 
২৪ ঘণ্টার অনলাইন সংবাদপত্রে কাজ করার কারণে মাসে অন্তত একটি রাতে নিয়ম করেই রাজধানীর রাস্তায় ঘুরপাক খেতে হয়। যে কারণে সিটি রাউন্ডে বেরোলেই চোখে পড়ে এই নিরাপত্তা প্রহরীদের। যারা ব্যাংক, ব্যাংকের এটিএম বুথ, বড় বড় টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনা পাহারায় রাতভর নিয়োজিত থাকেন। আর তাদের নিয়োগ দেয় বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানি।

রাতে অন্যের সম্পদ পাহারা দিয়ে যে কারো মনেই হয়তো দুঃখবোধ দেখা দিতে পারে। নির্ঘুম, দুর্বিষহ রাতের কথা ভেবে একাজের জন্য ভাগ্যকে দোষারোপ করে স্বস্তি খোঁজাও যেতে পারে। অথবা এই প্রহরীদের রাস্তায় দাঁড়িয়েই খাবার খাওয়ার মতো দৃশ্য দেখেও অমানবিক মনে হতে পারে। কিন্তু এই পাহারা দেওয়াটাই যে একটা কাজ। এ কাজের দায়িত্বই হচ্ছে-অন্যের সম্পদকে আগলে রাখা।
 
রোববার দিবাগত রাতে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে যা বোঝা গেল, পাহারায় যাওয়ার মানেই বোধহয় ঘুমিয়ে নেওয়া! কেননা, যারাই বিভিন্ন সম্পদ পাহারা দিচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছেন।
 
বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ গিয়ে দেখা গেল, এখানে যতগুলো ব্যাংক ও ব্যাংকের বুথ রয়েছে, সেসবের নিরাপত্তা প্রহরীরা সবাই ঘুমাচ্ছেন। কেউ স্থাপনার দেয়ালে হেলান দিয়ে, কেউ চেয়ারে বসে বিদ্যুতের খুঁটিতে হেলানরত অবস্থায়, কেউবা বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছেন।
 
একই অবস্থা কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, শাহবাগসহ অন্যান্য এলাকাকেও। পান্থপথ বাটা সিগন্যালে অগ্রণী ব্যাংকের সামনে গিয়ে কোনো পাহারাদারকেই পাওয়া গেল না। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রহরীরা ঘুমাচ্ছেন। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের বুথের সামনেও কাউকে সজাগ পাওয়া গেল না।
 
যেভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা ঘুমাচ্ছেন, তাতে ব্যাংক, বুথ, টাওয়ারের মতো স্থাপনার ভেতরে ঢুকে যে কোনো সিদ্ধহস্ত দুষ্কৃতিকারী সবার অজান্তে অঘটন ঘটাতেই পারে। অথচ, এই রাত্রীকালীন প্রহরীদের নিয়োগ দেওয়াই হয়েছে রাতভর জেগে থাকার জন্য। তবে, তাদের নিয়োগ দিয়েই যেন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ। কেউ কখনও মনিটরিং এ আসেন না। এদের দেখারও কেউ নেই।
 
বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে এসব বিষয় নিয়েই কথা হলো এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রহরীরা ঘুমিয়ে থাকলে পুলিশি টহল দিয়েও তেমন লাভ হবে না। কেননা, ঘটনা ঘটিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের পালিয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না। তারা জেগে থাকলে অনেক ক্ষেত্রে কেউ ইচ্ছা করলেও দুষ্কর্ম করার সাহস করে না। কিন্তু এদের অবস্থা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, পাহারাদারের পাহারায় কে?
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
ইইউডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।