ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রোড টু বান্দরবান

আলীকদম-থানচি, রাইড ইউথ আর্মি

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
আলীকদম-থানচি, রাইড ইউথ আর্মি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার-বান্দরবান থেকে ফিরে: স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভের (সৈকত তীরবর্তী সড়ক) দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে পর্যটনের আরেক স্বপ্নযাত্রা আলীকদম-থানচির শ্বাপদ সংকুল পথে প্রথমবারের মতো সড়ক নির্মাণের স্বপ্নপূরণ করলো বাংলাদেশ।

সেনাবাহিনী নির্মিত আলীকদম-থানচি পাহাড়ি সড়ক বান্দরবানের অপার সৌন্দর্য্য অবগাহন ও পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে যাচ্ছে। তাই এবার যাত্রা কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের পথে...
 
কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের আলীকদমে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা পার। সামনে সেনা স্কটের গাড়ি দুর্গম পথ মাড়িয়ে নিয়ে এলো আলীকদমে। উঁচু সড়ক বেয়ে গাড়ি উঠলো আলীকদম আর্মি ক্যাম্পে। এটি আলীকদম-থানচি সড়ক প্রকল্পের অফিস ও ক্যাম্প।
 
অত্যাধুনিক সুবিধার সব আছে এখানে। এত উঁচু আর নির্জনে বিদ্যুৎ আছে ভাবাটাও যেখানে কঠিন, সেখানে জেনারেটরের সাহায্যে সব ধরনের প্রাযুক্তিক সুবিধা রয়েছে ক্যাম্পে। আশেপাশে পাহাড়ি গুচ্ছ গ্রামগুলো এখান থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। আর জরুরি কোনো প্রয়োজনে এখানেই যেন হেলিকপ্টার নামতে পারে সেজন্য রয়েছে হ্যালিপেডও।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ক্যাম্পে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত আগেই ছিলো। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় এখানে সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নাধীন আলীকদম-থানচি সড়কের কিছু অংশের মেরামত ও সংস্কার কাজ ঘুরে দেখাই ছিল উদ্দেশ্য। এতো দুর্গম এলাকায় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগে এর আগে পিছিয়ে গিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পরে সেনাবাহিনী এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে।
 
ক্যাম্পে রাতের বিশ্রাম শেষে ভোরের আলোর সঙ্গে যাত্রা শুরু হলো সুউঁচু সড়ক পানে। আলীকদম-থানচির মত উঁচু সড়ক আর একটিও নেই। তাই এটি শুধু সড়কপথে যাত্রা নয়, বলা যায় রোমাঞ্চ যাত্রা।

২৩ অক্টোবর শনিবার কড়া রোদের সঙ্গে শরৎ আকাশের পাহাড় ছোঁয়া সাদা মেঘ সঙ্গী হচ্ছে বারবার। কাছে এসে যেন দূরে চলে যায় মেঘদল। আবার মেঘদল যেন দেখিয়ে দিচ্ছে পথ- এমন অভিজ্ঞতায় ভরা পুরো সড়কপথটা।

পথ হারালে এখান থেকে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে । তাই সেনা স্কটের গাড়িকেই অনুসরণ করে এগোচ্ছে আমাদের বহনকারী গাড়িটি।
 
রোমাঞ্চে ভরা দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকা এখনও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তাই পথে না দেখা পাওয়া গেল কোনো যানবাহন আর না কোনো জনমানব। তবে, দূরের পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস দেখা যাচ্ছে। একেকটি পাহাড়-টিলায় ১৫-১৬টি ঘর নিয়ে একেকটি গুচ্ছ গ্রাম।
 
জানা গেল, এসব গ্রামে পাহাড়ি মারমা, মুরং, চাকমাদের বসবাস। থানচির কাছাকাছি পৌঁছার পর তাদেরকে অনেকটা কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে।  
 
শেষ গন্তব্য থানচি এসে পৌঁছালাম। থানচির পরের পাহাড়ে থেকে শুরু মায়ানমার সীমান্ত। এখানকার ক্যাম্পে হালকা বিরতি শেষে এবার শুরু ফিরে আসার প্রস্তুতি।
 
আলীকদম থেকে থানচি পুরোটা পাহাড়ি সড়ক আঁকাবাঁকা আর ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক নির্মাণ শেষ হলেও প্রবল বৃষ্টিতে ধসে পড়া কয়েকটি অংশের এখন চলছে মেরামত। পাহাড়ি সৌন্দর্য্য উপভোগ আর দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে সরকার এই সড়ক নির্মাণ করেছে।

গত জুলাই মাসে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে রাস্তার ১১টি পয়েন্টে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে রাস্তা।
 
ঢাকা থেকে বান্দরবানের আলীকদম-থানচি সড়ক পরিদর্শনে যাওয়া কুঁড়িজন সংবাদকর্মীকে এ বিষয়ে তথ্য জানাচ্ছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর হুমায়ুন কবির।
 
আলী কদম থেকে থানচি পর্যন্ত যাওয়ার পথে কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীর মেরামত আগেই চোখে পড়েছে। ফিরে আসার পথে প্রত্যেকটি সংস্কার কাজের স্থানে গাড়ি থামিয়ে তা অবহিত করছিলেন মেজর হুমায়ুন।
 
তিনি জানান, গত ২৭ বছরের মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বেশকিছু স্থানে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে সড়কটি। ৩৩ কিলোমিটার এই সড়কের ১১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনায় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কিছু অংশে পাহাড় কেটে রিটেনিং ওয়াল এবং গার্ড দেয়াল দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে।
 
মেজর হুমায়ুন আশা প্রকাশ করে বলেন, ১১টি মোড়ে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ার পর আর সহজে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আগামী নভেম্বরে এ মেরামত কাজ শেষ হবে এবং ডিসেম্বরেই এটি খুলে দেওয়া হবে পর্যটকদের জন্য।
 
তখন উঁচু পাহাড়ি এই সড়ক হবে বান্দরবানের পর্যটনের নতুন দ্বার। নিজ গাড়ি চালিয়ে যে কেউ উপভোগ করতে পারবেন বান্দরবানের মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
এসএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।