ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রফুল্ল’ জুড়ে কেবলই কান্না

ইসমাইল হোসেন ও সাজেদা সুইটি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
‘প্রফুল্ল’ জুড়ে কেবলই কান্না ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কবি সুফিয়া কামাল হল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে: ভবনটির নাম ‘প্রফুল্ল’। সামনের বাগানে থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে।

কিন্তু প্রফুল্লের আবহ একদমই নেই। আছে কেবল কান্নার সুর, বিষাদের ছাপ।

রোববার (০১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ফয়সাল আরেফিন দীপন ফিরে এসেছেন এ ভবনে। তবে নিষ্প্রাণ, নিথর হয়ে। ‘প্রফুল্ল’র নিচতলায় খাটিয়ায় শুয়ে তিনি শেষ বিদায় নিচ্ছেন স্বজনদের কাছ থেকে।

স্বজনরা কাঁদছেন, আর বলাবলি করছেন, ‘মুখচ্ছবিতে কষ্টের কোনো ছাপ নেই, যেন কিছুটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে, জিরিয়ে নিচ্ছে আমাদের দীপন। ’

মরদেহ ঘিরে কন্যা-জায়া-জননীর কান্না যেন গলিয়ে দেয় পাথরখণ্ডও।

স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি নিজেকে কিছুটা শক্ত মনের বলে দেখাতে চান। সবাইকে বলেন, ‘আসুন, একটু দোয়া পড়ি। আল্লাহ যেন তার (দীপন) সব গুনাহ আমাকে দিয়ে দেন। ফেরেশতার মতো মানুষ ছিলেন তিনি। ’

মোনাজাত শেষে দু’হাতে স্বামীর মুখটি স্পর্শ করে কাঁদো কন্ঠে বলে উঠেন, ‘খুব কষ্ট হয়েছে, নাগো?’

তার কন্ঠে স্বজনদের কষ্ট যেন আরও বেড়ে যায়। ঘিরে থাকা স্বজনেরা আরও ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

পাশে চেয়ারে বসে একদমই চুপ দীপনের মা ফরিদা প্রধান। কোনো শব্দ করছেন না। যেন ছেলে ঘুমাচ্ছে, শব্দ করলেই ঘুম ভেঙে যাবে, ছেলের খুব কষ্ট হবে।

দীপনের আদরের ছোট্ট মেয়ে রিদমা। ‘বাবা নেই’- এটা বিশ্বাস করতে হয়তো সময় লাগবে অনেক দীর্ঘ। বাবার নিথর দেহটির সামনে বসে চোখের পানিটুকু মুছে নেয় বারবার। শনিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে এ অবিরাম কান্নায় তার চোখের পাতা-নাকের ডগা ফোলা, লালচে।

দীপনের বড় ছেলে রিদাত। আজ (রোববার) থেকে তার জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা দিতে যেতে চাইছিল না। কিন্তু শিক্ষাই এ পরিবারের সবচেয়ে বড় সম্পদ বলেই হয়তো বুকে পাথর বেঁধে জোর করে পাঠানো হয়েছে তাকে। বাবার স্বপ্নতো ছেলেই পূরণ করবে।

দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি প্রাণপণে। শিক্ষক বলেই হয়তো অনেক বেশি করে বোঝেন, তাকে বরাবরই বড় শক্ত থাকতে হবে।

এ পরিবারটিকে ঘিরে রেখেছেন স্বজনেরা। ফজলুল হক তাদের বলছিলেন, ‘বইতো কেউ না কেউ প্রকাশ করবেই। এই হত্যা এখানেই শেষ নয়। এ পরিস্থিতি ভালো করলে ভালো হবে’। এরপর শুধুই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মানুষ গড়ার এ কারিগর।

রিদাত ও রিদমা (৬ষ্ঠ শ্রেণি) দু’জনই উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থী।

ফজলুল হক ও ফরিদা প্রধান তাদের পরিবাগের বাসায় থাকেন।

কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক‍‍ চিকিৎসক জলি। এখানেই সপরিবারে থাকছিলেন তারা। আবাসিক কোয়ার্টার ‘প্রফুল্ল’র ৬ষ্ঠ তলায় তাদের গোছানো-পরিপাটি সংসার। কিন্তু ঝড় যেন লণ্ডভণ্ড করে দিল, বদলে দিল সব।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগে আজিজ মার্কেটের তৃতীয় তলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক-মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে।   জাগৃতির কার্যালয় থেকে সন্ধ্যায় তার মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

রাতে ছেলের দেহ মর্গে রেখে ফেরার সময় সন্তানহারা বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘বিচার চাই না আমি। মামলা করবো, কিন্তু বিচার আমি চাই না’।

তার কন্ঠে অদ্ভূত এক অভিমান ধরা পড়ছিল।

রোববার দুপুরে ‘প্রফুল্ল’ থেকে দীপনকে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান স্বজনরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এমআইএইচ/এসকেএস/এএসআর

** আজিজ সুপার মার্কেট তিনদিন বন্ধ
** আমি মানুষের সু-বুদ্ধির জাগরণ চাই: দীপনের বাবা
** দীপনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
** দীপনের শরীরে আঘাতের ৪ চিহ্ন
** দীপন হত্যার দায় স্বীকার আনসার আল ইসলামের
** বিচার চাই না, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক
** একটি কুচক্রী গোষ্ঠী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে
** শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর দীপনকে কুপিয়ে হত্যা
** খুনিদের ধরতে সিসি ফুটেজ সংগ্রহ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।