ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে: মাথায় সাদা কাপড় জড়ানো, দাড়িমণ্ডিত ফর্সা চেহারা। যেন শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
কিন্তু না, তিনি শুয়ে আছেন পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটের একটি বিছানায়। শরীরটা সাদা কাপড়ে মুড়ে আছেন বলে বোঝা যাচ্ছে না, তারেক রহিম আসলে কতোটা আহত।
শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত তিন প্রকাশক-লেখকের একজন কবি তারেক রহিম। অন্য দু’জন আহমেদুর রশিদ চৌধুরী টুটুল (স্বত্বাধিকারী) ও রণদীপ বসুর চেয়ে তারেকের অবস্থা গুরুতর।
চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে আলাপ করতে গেলে তারেক বাংলানিউজকে বলেন, সুস্থ হলে সব বলবো। আমার জন্য দোয়া করবেন। এ রুম থেকে সরিয়ে অন্য রুমে নেবে বলছেন ডাক্তার। বলেছেন, সেরে উঠবো আমি। একটু সময় লাগবে আরকি।
এভাবেই নিজের অদম্য প্রাণশক্তি তুলে ধরেন তিনি।
তারেকের দেখাশোনা করছেন বড় ভাই আদেল রহিম ও ভাগ্নে ইয়াসির আরাফাত।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তারেক তার ভাই আদেলকে জানিয়েছেন, ৫/৬ জন হামলা চালিয়েছিল। তবে কথা বাড়াননি আদেল। অসুস্থ তারেককে এসব স্মৃতি থেকে বের হতে বলেছেন।
তারা জানান, সকালে বাসা থেকে স্বাভাবিকভাবেই বের হয়েছেন। এরপর টুটুলের সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ তারেকের বন্ধু ফোন দিয়ে বাসায় জানান, হামলা হয়েছে।
আদেল বলেন, আম্মা সব সময় টেনশন করতেন। সাবধান করতেন অনেক। কিন্তু তাই বলে এতো বড় ঘটনা ঘটতে পারে, তা কখনো ভাবেননি।
আদেল ও আরাফাত মনে করছেন, টুটুলের সঙ্গে সখ্যতার কারণেই শিকারে পরিণত হয়েছেন তারেক। তারেকের প্রতি কোনো হুমকির কথা তাদের জানা নেই।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তারেক এখন মোটামুটি স্ট্যাবল অবস্থায় আছেন। হাতের আঘাতটা বেশি। সে তুলনায় মাথার আঘাত সামলে নেওয়া গেছে। শরীরে গুলিটা এখনো রয়েছে। পরে বের করা হবে।
ভাগ্নে ইয়াসির আরাফাত তারেকের চেয়ে মাত্র ৬ মাসের ছোট। বেশ বন্ধুত্বের সম্পর্ক মামা-ভাগ্নের।
আরাফাত বলেন, কখনো এমন কিছু তিনি করেননি, যাতে কোপানোর ঘটনা ঘটতে পারে। মামা অত্যন্ত ভালো ও নির্ভেজাল মানুষ।
‘নানু (তারেকের মা) প্রথমে বড় ধরনের আঘাত পেলেও ছেলে অন্তত বেঁচে আছে জেনে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি জানাচ্ছেন অবিরত’- বলেন তিনি।
চার বোন-দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তারেক। এখনো বিয়ে করেননি। তাই পরিবারের সবার তাকে নিয়ে আবেগ ও দুশ্চিন্তাও বেশি- জানান আদেল। কানাডাপ্রবাসী এ বড় ভাই বেড়াতে এসে ছোট ভাইয়ের গুরুতর বিপদ দেখছেন, কিছুটা মুষড়েও পড়েছেন।
চিকিৎসকরা বরাবরই আশাবাদী। তারা আশা করছেন, সময় লাগবে, তবে সেরে উঠবেন তারেক।
রণদীপ বসু
কোপাইছে, উদ্ধার কর
কেবিনে চিকিৎসা চলছে রণদীপ বসুর। বন্ধু প্রভাষ দাস দেখাশোনা করছেন।
তিনি বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে সে আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমাদের কোপাইছে, উদ্ধার কর’। সে ওই সময় কাঁদছিল। ভালো করে কথা বলতে পারছিল না। পরে জাতীয় জাদুঘরের পরিচিত একজনকে বলি। তিনি মোহাম্মদপুর থানায় ফোন করেন। উদ্ধারের পর দেখা গেল- তার মোবাইলটি রক্তে ভেজা।
শুদ্ধস্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারির একুশে বইমেলায় বের হবে রণদীপ বসুর ভারতীয় দর্শন ‘চার্বাকের খোঁজে’ বইয়ের পরবর্তী পর্ব। গত বছর বের হয়েছিল, এবারও চার পর্ব বের হবে। তা নিয়ে কাজ চলছিল।
রণদীপ বসুর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে প্রভাষ বলেন, কিছুটা সুস্থ আছে। মাথা, ঘাড়, পা, বাম হাতের কব্জিতে আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে কব্জির আঘাত মারাত্মক। এমন ভয়ংকর হামলা মাত্র ৫/৭ মিনিটের মধ্যেই শেষ করেছে দুর্বৃত্তরা। ভিতরে ৩/৪ জন এবং বাইরে আরও ২/৩ জন ছিল।
আহত রনদীপ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। তার ছেলে প্রান্তি নবম শ্রেণির ছাত্র।
টুটুলের দুই মেয়ে জানে না বাবার খবর
হাসপাতালের কেবিনে রেখে অবজারভেশন ও চিকিৎসা চলছে টুটুলের। স্ত্রী রুনা পাশে রয়েছেন। কিন্তু তাদের দুই মেয়ের কাছে প্রিয় বাবার আহত হওয়ার ঘটনা এখনও গোপন রাখা হয়েছে। বড় মেয়ে সম্প্রী পঞ্চম শ্রেণি ও ছোট সুপ্রী চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
টুটুলের বড় ভায়রা হাফিজ আহমেদ হাসপাতালে দেখাশোনার মাঝে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, টুটুলের প্রেসার ফল করছে। চিকিৎসকরা অবজারভেশনে রেখেছেন। চিকিৎসক স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন। মাথা ও ঘাড়ে আঘাত রয়েছে। এখন স্যালাইন চলছে, তন্দ্রাচ্ছন্ন, চোখ মেলছে, আবার বন্ধ করছে।
** ‘প্রফুল্ল’ জুড়ে কেবলই কান্না
** আজিজ সুপার মার্কেট তিনদিন বন্ধ
** আমি মানুষের সু-বুদ্ধির জাগরণ চাই: দীপনের বাবা
** দীপনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
** দীপনের শরীরে আঘাতের ৪ চিহ্ন
** দীপন হত্যার দায় স্বীকার আনসার আল ইসলামের
** বিচার চাই না, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক
** একটি কুচক্রী গোষ্ঠী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে
** শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর দীপনকে কুপিয়ে হত্যা
** খুনিদের ধরতে সিসি ফুটেজ সংগ্রহ
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এমআইএইচ/এসকেএস/এএসআর