ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট

মন্ত্রীর টার্গেট ১ মাস, বিএমটিএফের ৫ বছর

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
মন্ত্রীর টার্গেট ১ মাস, বিএমটিএফের ৫ বছর

ঢাকা: মোটরযানে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট (রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নাম্বারপ্লেট) প্রতিস্থাপনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একমাস (ডিসেম্বর পর্যন্ত) সময় বেধে দিয়েছেন।
 
এদিকে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ) সূত্র জানিয়েছে, কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ ছাড়া পাঁচ বছরেও সব মোটরযানে নাম্বারপ্লেট প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।


 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএমটিএফ সব মোটরযানে একমাস নয় একবছরের মধ্যে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট দিতে প্রস্তুত। তবে মালিকদের আইন মানতে বাধ্য করাতে হবে।
 
২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর (বুধবার) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ নাম্বারপ্লেট চালু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
 
মোটরযান চুরি রোধ, ফিটনেস ও লাইন্সেসবিহীন গাড়ি সনাক্তকরণে রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগযুক্ত রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নাম্বারপ্লেট।
 
আইএফআইডি ট্যাগের মাধ্যমে গাড়ির ট্যাক্স, ফিটনেস, রুটপারমিটসহ সব কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে।
 
বিআরটিএর হিসেবে, সারাদেশে মোটরযান (প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক) রয়েছে প্রায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার।
 
বিএমটিএফের হিসেবে, ৩১ অক্টোবর ২০১২ থেকে ১৫ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১০টি মোটরযানের রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নাম্বারপ্লেট সরবরাহ করা হয়েছে।
 
এর মধ্যে ৮৫ হাজার ৭৬৯টি কর্মাশিয়াল বাস-ট্রাক, ১১ হাজার ৬৬৭টি ব্যক্তিগত বাস-ট্রাক, ৩ লাখ ৫১ হাজার ১৯১টি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, ৭১ হাজার ১৯৩টি লেগুনা, ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪টি  মোটরসাইকেল ও ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৬টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা।
 
মোট ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫টি মোটরযান ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৯১টি কর্মাশিয়াল বাস-ট্রাক, ৬ হাজার ৭৩২টি ব্যক্তিগত বাস-ট্রাক, ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৯৭টি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, ৩০ হাজার ৪৯৪টি লেগুনা, ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭টি মোটরসাইকেল ও ১ লাখ ৯ হাজার ২১৪টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা।

এছাড়া ১৪ লাখ ১৮ হাজার ১৯০ অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ মোটরযান এখনো ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট এর জন্য আবেদন করেনি।
 
অপরদিকে, ১৪ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল ‍কাদের ঘোষণা দেন, ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট ব্যতীত ৩১ ডিসেম্বরের পর সারাদেশে কোনো মোটরযান চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
 
মন্ত্রীর ঘোষণার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।
 
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যে সব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে সে সব যানবাহন রিট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট এবং রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ ব্যতীত আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের পর সারাদেশের কোথাও চলাচল করতে পারবে না।
 
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তিটি জারি করে। তাতে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে রিট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট ও রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ সংযোজন ছাড়া কোনো মোটরযান রাস্তায় চলাচল করলে মোটরযান আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
 
বিআরটিএর নির্দেশনা আর মন্ত্রীর একমাসের (ডিসেম্বর) ‘টাইম লাইন’ বেধে দেওয়ার পরও আশানুরুপ আবেদন জমা পড়ছে না বলে বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে।
 
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে আমরা কাজ করছি। নির্দেশনার পরও যেসব মালিক তা মানবে না আমরা তার কঠোর ব্যবস্থা নেব।
 
তিন বছরে যা সম্ভব হয়নি মাত্র একমাসে কিভাবে সম্ভব হবে এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের প্রস্তুতি কম থাকলেও বর্তমানে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। টাইম লাইনের মধ্যে ভালো অগ্রগতি হবে।
 
তিনি বলেন, ঘোষণার পর থেকে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট নিতে মালিকরা লাইন ধরেছে, মালিকরা মানসিকভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সব হবে। মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে একট‍ু সময় লাগবে।
 
আইন প্রয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেক সমস্যা আছে। সময় দেওয়ার পরও যেসব মালিক নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ ছাড়া উপায় নেই।
 
পাঁচ বছরের আগে সব মোটরযানে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট সংযোজন সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেন বিএমটিএফের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মেজর মো. আসরাফ হোসেন।
 
তিনি বলেন, মোটরযান আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই, নেই মালিকদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। আইন না মানার প্রবণতা বেশিরভাগ মালিকের মধ্যে। বর্তমানে যে হারে হচ্ছে তাতে পাঁচ বছরের আগে সম্ভব নয়।
 
ডিসেম্বরের মধ্যে কোনোভাবেই সম্ভব নয় জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশের পর বিআরটিএ যদি আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ করে তাহলে এক বছরের মধ্যে অর্ধেক হতে পারে।
 
ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট নিতে মালিকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
 
তিনি বলেন, মালিকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। নাম্বার পরিবর্তনে একটু সময় লাগছে। মালিকরা সরকারের নির্দেশনা মানতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
আরইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।