ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও পলাতক ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছেন প্রসিকিউশন। এ অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি-না সে বিষয়ে আদেশের দিন আগামী ২৫ নভেম্বর ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

 

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিক অভিযোগে দাখিল করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। এ অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশের দিন আগামী ২৫ নভেম্বর ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।  
 
এ সময় আসামি সোলায়মানের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। ২৫ নভেম্বর এ আবেদনের শুনানির দিনও ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান উপস্থিত ছিলেন।
 
দুই আসামির বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর সাত খণ্ডে ৮৫২ পাতার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রসিকিউশনে হস্তান্তর করেন তদন্ত সংস্থা।
 
গত ১৪ জুন সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভীকে(৮৫) গ্রেফতার করা হলেও ইদ্রিস আলী সরদার পলাতক।

ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সলেমান মৌলভীকে।

২০১০ সালে শরীয়তপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার রাজাকার সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও সাতজন রাজাকারের (এদের অনেকেই মারা গেছেন) বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
 
তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন জব্দ তালিকার ৩ জনসহ মোট ৩১ জন সাক্ষী।
 
সোলায়মান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ
শরীয়তপুরের পালং উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর মুসলিম পাড়ার মৃত চাঁন মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা (৮৪) ও একই উপজেলার মাহমুদপুরের মৃত হামিক আলী সরদারের ছেলে ইদ্রিস আলী সরদার (৬৭)। তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, সোলায়মান মোল্লা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য শান্তি কমিটিতে এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। এরপর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শরীয়তপুরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরণের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। সোলায়মান মোল্লা ১৯৬৩ সালের পর মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে শরীয়তপুর জেলার পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
 
ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিস ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী একই রকম অপরাধ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামি ছাত্র সংঘের’ নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামি ছাত্রসংঘের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
 
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলে রাজাকার হিসেবে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। তাদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা এলাকার কয়েকশ’ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে। নারীদের হত্যার আগে ক্যাম্পে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২২ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার তখনকার পালং থানার আংগারিয়া, কাশাভোগ, মানোহর বাজার, মধ্যপাড়া, ধানুকা, রুদ্রকরসহ হিন্দু প্রধান এলাকাগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় রাজাকাররা। ওইসব গ্রামের নয়জনকে হত্যায় সহায়তা করেন আসামিরা। তারা শহীদদের অবস্থান দেখিয়ে দেন, আর পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। তিন শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষণ চালান তারা।
 
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ মে আসামিরা দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ’ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ মানুষকে গুলি করে হত্যা ও বাড়ির মালামাল লুট করেন।
 
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ মে পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলে করে হত্যা ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন আসামিরা। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেন। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করেন।
 
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন আসামিরা।
 
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।