ঢাকা: ফের সময় ও ব্যয় বাড়লো মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের। এতে করে সহসাই দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর।
৭৭২ দশমিক ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় এখন ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা।
তেজগাঁও-পান্থপথ লিংক রোড এফডিসি গেটের পরিবর্তে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত ৪৫০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এতে করে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত যাচ্ছে ফ্লাইওভারটি। এ খাতে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি আগামী বছরের শেষ দিকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিল। এখন নির্মাণকাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাস নাগাদ।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য(সচিব) আরাস্তু খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইএমইডি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বার বার ফোনে দিলেও রিসিভ করেননি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাজমুল আলম।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ৪৪৬ দশমিক ১৯ কোটি টাকা খরচের একটি ছকও উপস্থাপন করেছে এলজিইডি। এতে দেখা গেছে, জিওবি ব্যয় ২৪১ দশমিক ২৬ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ব্যয় ১৬ কোটি টাকা এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ বাবদ ২৫৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানার জন্যই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য(সচিব) আরাস্তু খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় কিছু বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে। যে কারণে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তেজগাঁও-পান্থপথ লিংক রোডের অংশ বাড়ছে। ফলে এফডিসি গেটের পরিবর্তে ফ্লাইওভারটি সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া নকশা, পরামর্শক ও অতিরিক্ত পাইলের কারণে খরচ ও সময় বাড়ছে।
তিনি জানান, এলজিইডি ৪৪৬ দশমিক ১৯ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব করেছে তা যৌক্তিক। যে কারণে এটা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকল্প সংশোধনের নানা কারণ উল্লেখ করে এলজিইডি। সিভিল ওয়ার্কের ব্যয়, প্রকল্প এলাকায় সেবা দানকারী সংস্থার সার্ভিসেস ইউটিলিটি ১৩২ কেভি হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিক লাইন, গ্যাস পাইপ লাইন, স্ট্রোম ওয়াটার লাইন, স্যুয়ারেজ লাইন, বিটিসিএল লাইন ও ফাইবার অপটিক্যাল লাইন থাকার কারণে ব্যয় বেড়েছে। এসব লাইন কাজ চলমান অবস্থায় স্থানভিত্তিক প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি পাইল ও ফাউন্ডেশনের নকশা পৃথক পৃথকভাবে করায় প্রকল্পের পাইল সংখ্যা বাড়ছে।
এছাড়া পাইলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, পাইল ক্যাপ এবং সাইজ বাড়ায় ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূ-গর্ভস্থ ইউটিলিটি পরিসেবা অক্ষুন্ন রেখে প্রতিটি ফাউন্ডেশনের নকশা করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে বর্তমানে ভূমিকম্পের প্রকোপ মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ও প্রতিবেশি দেশগুলোতে প্রলয়ঙ্করি ভূমিকম্প হওয়ার কারণে বুয়েটের পরামর্শ অনুসারে ফ্লাইওভারে পট বিয়ারিং ও এসটিইউ(শক ট্রান্সমিশন ইউনিট) সংযোজনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কাজ এবং সময় বৃদ্ধির কারণে দেশি ও বিদেশি পরামর্শক বাবদ প্রায় ১৬ কোটি টাকা বাড়ছে।
ঢাকা মেট্রোলিটন এলাকার সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ রোড এবং মগবাজারসহ মালিবাগের দু’টি রেলক্রসিংয়ের যানজট নিরসনই এর প্রধান উদ্দেশ্য। নুতনভাবে এটি সোনারগাঁও হোটেলে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে।
সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার, ৩ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৭০ বর্গমিটার অবকাঠামো নির্মাণসহ দু’টি ডাবল কেবিন পিক-আপ কেনা হবে। এছাড়া ৪০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ, তিনটি ল্যাপটপ ও একটি কম্পিউটার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন করবে সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসডিএফ) , ওপেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল (ওএফআইডি) ও কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট(কেএফএইডি)।
প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রথম ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ৭৭২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ালো ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে সময় বেড়ে দাঁড়ালো ২০১৭ সালের জুন নাগাদ। বর্ধিত সময় ও ব্যয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে তবুও সংশয় আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর