ঢাকা: সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও জেলা পরিষদকে বাদ রেখেছে সরকার। এতে এই নির্বাচনটির ভবিষ্যৎ বরাবরের মতো আরও পিছিয়ে গেলো।
গত ১৬ নভেম্বর জেলা পরিষদ আইন সংশোধনের বিলটি সংসদে প্রত্যাহার করে নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি তা করেছেন।
জানা যায়, জেলা পরিষদ দলীয়ভাবে সম্পন্ন হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যর (এমপি) সঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই নাকি কমিটি বিলটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করে।
এর আগে, গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অন্যান্য স্থানীয় সরকারের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচনও দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে আইন সংশোধনের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে তা বিল আকারে ১১ নভেম্বর সংসদে উত্থাপিতও হয়। সংসদ তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠায়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা স্থানীয় এ সরকারের নির্বাচনের পথ প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন অনেকে। তবে বিলটি প্রত্যাহার হওয়ায় আবারও অনিশ্চয়তার মুখে জেলা পরিষদের নির্বাচন।
স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুশাসন আরও একধাপ নিশ্চিতের জন্য ২০০০ সালে গঠন করা হয়েছিল জেলা পরিষদ। কিন্তু ১৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করা হয়নি। আইনে এ নির্বাচনের সব ক্ষমতা সরকারের হাতেই ন্যস্ত থাকায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অবস্থানও কেবল আদেশ পালনকারীর ভূমিকায়। মূলত, নির্বাচন আয়োজন করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাই নেই স্বাধীন এই সংস্থাটির।
এদিকে, ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য স্থানীয় সরকারের আইনের সঙ্গে জেলা পরিষদ আইনে ব্যাপক ‘অমিল’ তৈরি করা হয়েছে। আইনে এমনভাবে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যার ফলে আজীবন প্রশাসক দিয়ে এ সরকার ব্যবস্থা চালালেও কোনো সমস্যা নেই। অথচ অন্যান্য স্থানীয় সরকার আইনে কতদিন প্রশাসক নিয়োজিত থাকবে তা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ আইনে কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। এছাড়া অন্য নির্বাচনগুলো পরিচালনার জন্য বিধিমালা তৈরির এখতিয়ার ইসির হাতেই ন্যস্ত। কিন্তু জেলা পরিষদ আইনে সরকারের হাতেই এ ক্ষমতা রাখা হয়েছে। ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সব ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান করার এখতিয়ার কেবল সরকারের।
জেলা পরিষদ আইন-২০০০’র ১৯ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সেই তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অথচ সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, প্রথমবার করপোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে আইন বলবৎ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, ২০০০ সালে জেলা পরিষদ কাগজে কলমে গঠন হলেও সরকার ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১টি জেলায় প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ আইন বলবৎ করেছে। অথচ প্রজ্ঞাপন দ্বারা এর প্রথমবার পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেনি এখনও।
২০১১ সালে সরকার জেলা পরিষদ আইনের ৮২ (১) ধারা বলে প্রশাসক নিয়োগ করে। এতে বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক না কেন, এ আইনের বিধান অনুযায়ী জেলা পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত একজন প্রশাসক জেলা পরিষদের কার্যাবলী সম্পাদন করবেন।
অন্যদিকে, জেলা পরিষদ আইনের ২০ (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের অধীন নির্বাচনের জন্য বিধি প্রণয়ন করবে সরকার। এতে রিটানিং কর্মকর্তাসহ সব ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার নিয়োগ, তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, প্রার্থীর মনোনয়ন, নির্বাচনী অপরাধের শাস্তিসহ যাবতীয় বিষয় নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের। অথচ সিটি করপোরেশনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা কেবল ইসির।
এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। কেননা, এ নির্বাচনের সব ক্ষমতা সরকারের হাতে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন বহুদূর, এখনও বিধিমালাই তৈরি হয়নি। এছাড়া আইনে কমিশনের কাছে নির্বাচন সম্পন্ন করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।
২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে সরকার প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে জেলা পরিষদ পরিচালনা করছে। আইন অনুসারে, একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং ৫ সংরক্ষিত নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। তারা নির্বাচকমণ্ডলির ভোটে নির্বাচিত হবেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়েই গঠিত হবে নির্বাচকমণ্ডলি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
ইইউডি/আইএ