ঢাকা: বর্ধিত ভাড়ায় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে রাজি হচ্ছেন বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশার চালক। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ৬টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে বিষয়টি।
এতে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হচ্ছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রীও।
রোববার (০১ নভেম্বর) থেকে বর্ধিত ভাড়ায় প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা, দুই কিলোমিটারের পরে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা করে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চলাচল শুরু হয়।
চট্টগ্রামে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ হিসেবে চলা শুরু করবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে সন্ধ্যায় জানান, তাদের ৫টি টিম দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলিস্থান, পল্টন, প্রেসক্লাব, মতিঝিল ও কাকরাইল এলাকায় ৯৬টি অটোরিকশার চালক ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে।
এর মধ্যে ৮৩টি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঠিক মিটার পাওয়া গেছে। দু’টিতে শুধু মিটারের ফ্রেম দেখা গেছে। আর বাকি দু’টিতে মিটার বক্স আছে, কিন্তু মিটার দেখা যায়নি। বাকি সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোর মিটার এবং তার রিডিং ঠিক ছিলো বলে জানিয়েছে সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ টিম।
মোজাম্মেল হক আরও জানান, তারা ১১২ জন যাত্রীর মধ্যে ৮৭ জন যাত্রীকে মিটারে যেতে দেখেছেন। বাকি ২৫ জন যাত্রীর মধ্যে ১৮ জন যাত্রী চালক মিটারে যেতে চান না বলে চুক্তিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
আর ৭ জন যাত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে মিটারে যেতে চাননি বলে ওইসব সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ টিমের কাছে দাবি করেছেন।
যাত্রীদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠন আরও জানায়, তারা দেখেছেন, সদরঘাট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৬০০ টাকা চুক্তিতে ইকবাল আহমদ নামে একজন যাত্রী অটোরিকশা নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মিটারে যাওয়ার বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এ ব্যাপারে বলেন, তাদের সংগঠনের পর্যবেক্ষণে ৪০ শতাংশ যাত্রীর কাছে মিটার ও নতুন ভাড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, বর্ধিত ভাড়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলা শুরু করায় এ নিয়ে একটি শৃঙ্খলা আসতে শুরু করেছে। তবে প্রথম দিন হওয়ায় অনেক প্রাইভেট সিএনজি চালিত অটোরিকশা, যেগুলো চুক্তিতে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে রাস্তায় চলাচল করে তাদের কম দেখা গেছে। আর ঢাকার আশেপাশের অটোরিকশাও রাজধানীর ভেতরে তেমন আসেনি।
এ কারণে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংকটও পরিলক্ষিত হয়েছে তাদের পর্যবেক্ষন টিমের কাছে। এদিকে বিআরটিএ’র বিভিন্ন টিমও তাদের পযবেক্ষণ জানিয়ে বলেছে, মিটারেই চলছে সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো। তবে মিটার ছাড়া যেগুলো চলছে সেগুলো প্রাইভেট অটোরিকশা।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, প্রাইভেট সিএনজি চালিত অটোরিকশার চুক্তিতে চলাচল দেখলেই ডাম্পিংয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া আছে সবগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বির আলম বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দিনে তাদের অভিযান চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। অভিযানে ৩টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ডাম্পিং, ১০টি মামলা এবং ৮ হাজার ৫ শ’ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২০০২ সালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু হওয়ার পর সরকার পাঁচবার ভাড়া বাড়ালেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে পারেনি। এবার পঞ্চমবারের মতো বাড়ানোর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সকালে মহাখালী ওয়ারলেস থেকে ধানমণ্ডিতে এসে নেমেছেন একজন যাত্রী। মিটারে তার ভাড়া এসেছে ১৪০ টাকা। সে অনুযায়ী ভাড়া দিয়েছেন তিনি। মিটার ছাড়া আগে তাকে এখানে আসতে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা গুনতে হতো।
এদিকে বনানী-কাকলী থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড যেতে আগে অটোরিকশা চালক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করতেন। কিন্তু মিটারে এখন সে ভাড়া ২০০ টাকার মধ্যেই আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এসএ/এএসআর
** ৩টি ডাম্পিংয়ে, ১০ মামলা, ৮৫০০ টাকা জরিমানা
** ‘যামু না কি করবেন’
** অটোরিকশা মিটারে চলে না, মিটারে চলে!
** অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে