ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মতের অমিল হলেই জঙ্গিরা হত্যা করছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
মতের অমিল হলেই জঙ্গিরা হত্যা করছে ছবি: রাজিব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মতের অমিল হলেই জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের হাত থেকে যেমন লেখক-গবেষক-বিজ্ঞান মনস্ক লেখকরা রেহাই পাচ্ছেন না, তেমনি রেহাই পাচ্ছেন না পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীরাও।



রোববার (১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের হত্যাকারী; কবি তারেক রহিম, শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল ও লেখক রণদীপম বসুর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
 
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, নারী নেত্রী খুশি কবির, রোকেয়া কবির, শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার প্রমুখ।

ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আজকে যারা (জঙ্গিরা) ব্লগার-লেখক-প্রকাশকদের হত্যা করছে, তাদের যুদ্ধ কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। আল্লামা ফারুকী নামে একজন ইসলামিক স্কলারও তাদের এই মিশন থেকে রেহাই পায়নি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এমন লোকদেরও ছাড় দিচ্ছে না তারা, দেবেও না। যারাই তাদের সঙ্গে একমত নন, তাদেরই হত্যা করবে তারা ।
 
সরকার জঙ্গিদের সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার ইতোমধ্যে মহাজট পাকিয়ে ফেলেছে। আমরা তাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্যে ক্ষমতায় পাঠিয়েছি। অথচ তারা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জঙ্গিদের এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে- তারা (জঙ্গিরা) হত্যা করেই যাচ্ছে। তাদের (সরকার) এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী থাকতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে।
 
সরকারের উদ্দেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, আপনারা সীমালঙ্ঘনের প্রশ্ন না করে নিজেদের ঠিক করেন। আপনাদের (মহাজোট) অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে, একটাও প্রতিবাদে রাজপথে নেই কেন? আপনারা কি হত্যাকারীদের পক্ষ নিচ্ছেন? আপনারা সমঝোতা করেন। রাজশাহী গিয়ে বৈঠক করে আসেন। বলতে চাই, সকল অপতৎপরতা মোকাবেলা করবো।

তিনি বলেন, অনেকে এখন ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখবে, এটা করলো কেন? ওটা করলো কেন? এগুলো না করলে তো হত্যা হতো না। এরাই হত্যাকারী। এদের ধরে রিমান্ডে নিলে মূল হোতা বেরিয়ে আসবে।
 
আবুল বারকাত বলেন, কাদের কাছে বিচার চান? যারা বিচার করবে তাদের একটা অংশ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মদতদাতা ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করে। আল-কায়েদা ও আইএসের স্রষ্টা যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জেএমবি-আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে আল-কায়েদার সরাসরি সম্পর্ক। আর এসবের মূলে মৌলবাদের অর্থনীতির সম্পর্ক।
 
তিনি বলেন, বৈশ্বিক পুঁজিবাদী কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে আমেরিকা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে। আজকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা, তারা এটা মনে করলে থাকেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারবো না।

খালেকুজ্জামান বলেন, আপনাদের (সরকার) দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন হত্যাকারীদেরও যদি খুঁজে বের করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তবে, কঠিন সংকটের মুখোমুখি হতে হবে আপনাদের।

খুশি কবির বলেন, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আছে, তারা কী করছে? তারা কেন এখনও হত্যাকারীদের ধরতে পারছে না?
 
এ এন রাশেদা বলেন, দেশে মাদরাসা ভরে গেছে। মা-বাবা, চাচা-খালু এমনকি বঙ্গমাতার নামেও মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাই, মাদরাসা শিক্ষার অবসান ঘটবে, এক ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন হবে, আমাদের শক্তি জাগিয়ে তোলা যাবে।
 
সমাবেশ শেষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র। তিনি জানান, সোমবার (২ নভেম্বর) সারাদেশে শোক দিবস পালন করা হবে। অর্ধদিবস হরতাল পালন করা হবে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর)। শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ ও বিকেলে হরতালের সমর্থনে শাহবাগ মোড় থেকে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
 
সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা ও বাংলা মোটর মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল, কবি তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এরপর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা।
 
** মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতাল
** শাহবাগে চলছে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এসইউজে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।