ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পেরিয়ে একটু এগুতেই একটি বাড়ি। সাধারণ কিন্তু কী গভীর প্রশান্ত।

চারিদিকে শূন্যতা। সাদামাটা দু’তলা বাড়িটির সামনেই বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী’র একটি ফলক ঘোষণা করছে  বাড়িটির গুরুত্ব।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী নগরীর কলেজ রোড এলাকার এ বাড়িটির ইট-ধূলিকণায় লেগে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন। এ কারণেই বাড়িটিকে ময়মনসিংহবাসীর সংগ্রামী রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ময়মনসিংহ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতির শহর। সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হবার পর সরকারি চাকরি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

এরপর তিনি এ বাড়িতেই থাকতেন। ১৯৫৫ সালের দিকে তিনি আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।

জাতীয় রাজনীতির সুবাদে তাকে রাজধানীতে অবস্থান করতে হলেও, নগরীর কলেজ রোডের এ বাড়ি থেকেই শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম নিজ জেলা ময়মনসিংহকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এ বাড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে তার সংগ্রামী জীবনের স্মৃতি।

১৯৫৭ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত সরকারের এ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িতেই বড় হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাফায়েতুল ইসলামসহ অন্য সন্তানেরা।

জাতীয় চার নেতা স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান খান মিল্কী জানান, ১৯৬১ সালের দিকে ময়মনসিংহ শহরের গোলকীবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে বসবাস করলেও, ৬৪ সালের দিকে কলেজ রোড এলাকায় জমি কিনে একটি টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করে নিয়মিত বসবাস শুরু করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তিন রুমের টিনশেডের বাড়িটি পাকা করা হয়।

আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান এ মহান নেতার সহধর্মিণী নাফিসা ইসলাম স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পর এ বাড়িতেই থাকতেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ বাড়িতেই স্বামীর স্মৃতি আ‍ঁকড়ে ছিলেন। এরপর ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনিও চলে যান না ফেরার দেশে। শূন্য হয়ে যায় বাড়িটি।

বর্তমানে রজব আলী নামে একজন কেয়ারটেকার বাড়ির দেখাশোনা করেন।

তিনি জানান, মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে এসে রাতে থাকেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর সারা বছর কেউই কোনো খোঁজ করেন না।

প্রতি বছর ০৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে নগরীর সব পথ এসে শেষ হয় কলেজ রোডের এ বাড়িতে। দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু সাধারণ মানুষ তাদের মহান নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসে জড়ো হন।

নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে, ময়মনসিংহ নগরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।

তবে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মহান এ নেতার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর তত্ত্বাবধানে টাউন হল মোড়ে নির্মিত হয়েছে ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।