ঢাকা: কানাডা প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজনীতিক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক, বেতার ও টেলিভিশন ভাষ্যকার, সাংবাদিক, লেখক ও কবি সৈকত রুশদী ৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৫৭ বছরে পা দিলেন।
১৯৮০’র দশকে লন্ডনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস’র সদর দফতরে ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজের পর ১৯৯০ দশকে তিনি বাংলাদেশে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের দূতাবাসে ঊর্ধ্বতন গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে কাজ করেন।
১৯৫৯ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তবর্তী শহর মেহেরপুরে এক হাসপাতালে তার জন্ম। ব্যবসায়ী আ.ক.ম. মনিরুল হ্ক ও রোকেয়া বেগমের একমাত্র পুত্র সৈকত রুশদী নদীয়া-কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার জাফর আলীর পৌত্র।
তার লেখাপড়ার শুরু মেহেরপুর বি এম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ (বর্তমানে বিজ্ঞান কলেজ), আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক (বিএসএস) ও স্নাতকোত্তর (এমএসএস) ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র থাকাকালেই সাপ্তাহিক ‘কিশোর বাংলা’সহ একাধিক পত্রিকায় তার ছড়া ও কবিতা লেখার শুরু।
১৯৭৮ সালে সেসময়ের সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় ক্রীড়া বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিকতায় পদার্পণ। পরবর্তীতে তিনি সাপ্তাহিক ‘মতামত’ ও ‘দৈনিক দেশ’ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেন।
লন্ডনে বিবিসি’র বাংলা বিভাগে ব্রডকাস্টার হিসাবে কাজ করেন ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে। ঢাকায় ফিরে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেন দৈনিক খবর ও ইংরেজি দৈনিক দ্য বাংলাদেশ টাইমস-এ।
এসময়ে ভারতের সাপ্তাহিক ‘দেশ’সহ একাধিক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রচিত নিবন্ধ, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়।
১৯৯২ সালে তিনি ঢাকায় কানাডার দূতাবাসে তথ্য ও রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।
একবছর পর যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটেনের দূতাবাসে প্রথমে ঊর্ধ্বতন গণমাধ্যম ও জন বিষয়ক কর্মকর্তা এবং পরে ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। ২০০৩ সালে চাকরি ছেড়ে তিনি সপরিবারে অভিবাসী হন কানাডায়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সৈকত রুশদী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন ১৯৯১-১৯৯২ মেয়াদে। বর্তমানে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সহযোগী সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম ও বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সমিতির সদস্য, পরিবেশ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান হল্ট গ্রিনহাউস’র যুগ্ম আহবায়ক এবং লায়ন্স ক্লাব ও ঢাকা প্রগতি গ্রেটার’র পরিচালক হিসাবে অবদান রেখেছেন।
তিনি ১৯৮৫ সালে ব্রিটেনের বাংলা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলায় অবদান রাখেন।
বাংলাদেশে দাবা ফেডারেশন ও ক্রিকেট বোর্ডের গণমাধ্যম বিষয়ক কমিটিতেও তিনি কাজ করেছেন। টরন্টোতে তিনি ভ্যালিপার্ক স্কুলের পরামর্শক কাউন্সিল’র নির্বাচিত সদস্য এবং ভ্যালিপার্ক গো গ্রিন ক্রিকেট ফিল্ড প্রকল্পের সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন।
তার প্রকাশিত রচনা ও কাজের মধ্যে রয়েছে, উপন্যাস ‘অচিন পাখী’ (২০০৩); সম্পাদিত প্রকাশনা লন্ডনের বাংলাদেশ সেন্টারের জন্য ‘একুশে স্মরণিকা’ (১৯৮৪) ও ‘হল্ট গ্রিনহাউস’ (১৯৮৯) এবং কাঠের কাজ বাংলাদেশ সেন্টারের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রেপ্লিকা।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের দিনটিকে ভিত্তি করে মেহেরপুরে প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৭ এপ্রিল ‘বাংলার ঐতিহ্য মেহেরপুর উৎসব’ নামে একটি সার্বজনীন উৎসব চালু করার প্রস্তাবক তিনি।
সাংবাদিক হিসেবে তিনি ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক’র উদ্বোধনী শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৫) ও কানাডার ভিক্টোরিয়ায় জাতিসংঘের শিশুদের জন্য পরিবেশ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন (২০০২) সহ দেশে ও বিদেশে বহু সম্মেলন, অনুষ্ঠান ও ঘটনার খবর পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেন।
বিভিন্ন সময়ে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলাদেশে চ্যানেল আই টেলিভিশন, কানাডার এশিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ও স্যাটেলাইট রেডিও এক্সএম রেডিও তার সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে তিনি একাধিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কলাম লিখে থাকেন এবং কানাডার এশিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-এ ভাষ্যকার হিসাবে কাজ করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
জেডএস