ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীর সড়ক যেন সম্পত্তি!

ফররুখ বাবু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
রাজধানীর সড়ক যেন সম্পত্তি! ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

ঢাকা: যানজটে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজধানী ঢাকার সড়কে গণপরিবহন চালকদের ইচ্ছেপূরণে যেন কমতি নেই। যাত্রীদের অকথ্য ভাষা ও ট্রাফিক পুলিশের চোখ রাঙ্গানর পরও গণপরিবহনের চালকদের ইচ্ছে মাফিক চলছে গাড়ির চাকা।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনই অবস্থা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীতে গণপরিবহন থামানোর জন্য নির্ধারিত স্থানের অনেক সঙ্কট। আর যেটুকু নির্ধারিত স্থান রয়েছে সেখানেও বাস থামে না। হয় কোনো লিংক রোডের মুখে, নয়তো সিগন্যালের মুখে রাস্তার ওপর বাস থামাতে অভ্যস্ত চালকরা। এছাড়া ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে ধীর গতিতে গাড়ি চালানো এবং যাত্রী ওঠানামা করানো যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর একই সড়কে বিভিন্ন গতির যান চলাচল করে। কিন্তু গণপরিবহন চালকরা শুধু নিজেদের কথা ভেবে যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করান। কখনও আড়াআড়িভাবে, কিংবা গতি কমিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে সামনের দিকে এগিয়ে।
 
দেখা যায়, সাইন্সল্যাব মোড়, পল্টন হয়ে শাহাবাগ যাওয়ার মোড়, বিজয় সরণির মোড়, গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বরের মোড়, শাহাবাগ থেকে পল্টন যাওয়ার মোড়, মৌচাক থেকে শান্তিনগর যাওয়ার মোড়, মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক যাওয়ার মোড়, মহাখালী থেকে ফার্মগেট যাওয়ার মোড়, মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁওয়ের মোড়সহ ঢাকার চৌরাস্তার প্রতিটি মোড় দখলে রেখে গাড়ি থামিয়ে রাখেন গণপরিবহন চালকরা।
 
এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরও ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে পার করেন সিগন্যাল, যেন যত হবে দেরি; তত করা যাবে যাত্রী সংগ্রহ। এতে পেছনে থাকা অন্য গাড়িগুলোর গতিও কমে আসে, গাড়ি পাস করতে না পারায় সিগন্যাল ছাড়লেও লেগে থাকে লম্বা যানজট।
 
আয়তন অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় জনগণের অবস্থান বরাবরই বেশি। তবে সে অনুযায়ী গাড়ি চলাচলের সড়ক খুবই কম। তাতে কী, যেটুকু সড়কই আছে- তা যেন সবার নিজের সম্পত্তি হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সব থেকে বেশি নিজেদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী রাজধানীর সড়ককে নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন গণপরিবহনের চালকরা।
 
চালকদের মন গড়া চলাফেরায় বাধা দিতে আইনশৃখলা বাহিনীরও কিছু করার নেই। পরিস্থিতি যেন এখন এমনই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার বনজ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, এতো অনেক পুরান সমস্যা। আর এ সমস্যা জোর করে দূর করা সম্ভব নয়।
 
তিনি বলেন, আমরা মাঝে মাঝে মালিক ও শ্রমিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করি। তারা বৈঠকে আশ্বাস দেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো মিল পাওয়া যায় না তাদের কথার।
 
এছাড়া ‘মাঝে মধ্যে অনিয়মের কারণে গাড়িতে রেকার লাগাই। তবে চালকরা বলেন- স্যার আমাকে পেছন থেকে ঠেলা দেয়; তাই সিগন্যালে এসে দাঁড়িয়েছি’ বলেন ডিএমপি দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার।
 
যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিষয়ে একাধিক গণপরিবহন চালক নিজের দোষ অন্য চালকদের ওপর চাপিয়ে দেন বলেও মত দিলেন যুগ্ম কমিশনার বনজ কুমার।
 
এ নিয়ে কথা হয় সিটি সার্ভিস বাসের চালক আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক রুটে একাধিক গাড়ি চলায় প্রতিযোগিতা বেশি। তবে কেউ ইচ্ছে করে নিয়ম ভাঙে না। অন্য চালকের জন্য মাঝে মধ্যে কিছুটা নিয়ম ভাঙা পড়ে।
 
এদিকে, ঢাকার যানজট নিরসনে ও নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাচলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
 
গণপরিবহন চালকদের যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিষয়ে পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার মধ্যে ও মোড়ে গাড়ি থামিয়ে রাখা ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধে সরকারের অর্থের প্রয়োজন হয় না। প্রচলিত আইনের ব্যবহার করলেই এর সমাধান সম্ভব।
 
‘আর নাগরিকদের এই সামান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের পরিকল্পনার দরকার নেই, প্রয়োজন আইনের সঠিক ব্যবহারের দেখভাল করা’ যোগ করেন তিনি।
 
আবদুস সোবহান উদাহরণ হিসেবে বলেন, সাইন্সল্যাব মোড়ের মুখে বাস যদি একটু সামনে ল্যাবরেটরির সীমানা শেষে ময়লা ফেলার স্থানে থামে তবে ওই মোড়ে আর জ্যাম পড়ে না। মোড়ে এক সঙ্গে সাত থেকে ১০টি বাস লাইন ধরে থামতে পারবে। আবার যাত্রী ওঠানামা শেষে স্থান ত্যাগ করতে সমস্যা হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এফবি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।