ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে কোনো অর্থ দেয়নি মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড নামক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে তাদের নামে ৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার যে অনুদান দেখানো হয়েছে তা তাদের ফান্ড থেকে দেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে সাক্ষ্য দানকালে এসব কথা জানিয়েছেন মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম জাহাঙ্গীর।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ১৯তম সাক্ষী হিসাবে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এরপর মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্সের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল এমরান চৌধুরী আদালতে ২০তম সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দেন।
একই আদালতে চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বিচারিক কার্যক্রম। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মোট পৌনে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আটজনও মামলা দু’টির আসামি।
সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার মামলা দু’টির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
এএফএম জাহাঙ্গীর তার সাক্ষ্যে বলেন, ২০০৫ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম খান আমাকে মোবাইলে ফোন করে বলেন যে, ‘আমি একটি অসুবিধায় পড়েছি। হারিছ চৌধুরী আমাকে কয়েকটি পে-অর্ডার করতে বলেছেন। আমার সঙ্গে তো ধানমণ্ডি এলাকার কোনো ব্যাংক ম্যানেজারের পরিচয় নাই। আপনি যদি একটু আমাকে সাহায্য করতেন’। আমি তাকে পে-অর্ডার করানোর জন্য শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখায় নিয়ে গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। এরপর আমাদের অ্যাকাউন্টেসের রাশেদুজ্জামানকে ফোনে ডেকে এনে তাকে পে-অর্ডারে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়ে আমি চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান আমাকে নোটিশ দিয়ে দুদক কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। আমি ওইদিন দেখা করলে আমাকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অনুকুলে ৫টি পে-অর্ডার দেখিয়ে তিনি বলেন যে, আমরা এ পে-অর্ডারগুলো করেছিলাম কিনা। আমি বলি- না, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে আমরা কোনো অর্থ দেইনি। আমি অ্যাকাউন্টসের সমস্ত হিসাব, ব্যাংকের জমা- উত্তোলন বহিসহ সমস্ত কাগজপত্র দুদদকে দেখাই।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ আমাকে বলেন, ‘আপনার কথাগুলো আদালতে বলতে পারবেন কি-না’? আমি রাজি হয়ে পরদিন ১১ অক্টোবর ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষী হিসাবে জবানবন্দি দেই।
এরপর মেট্রো মেকার্সের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল এমরান চৌধুরী তার সাক্ষ্যে বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অনুকুলে মেট্রো মেকার্সের নামে ৫টি পে-অর্ডারে যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অনুদান দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে মেট্রো মেকার্সের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের কোনো ডিরেক্টর, শেয়ার হোল্ডার কিংবা মেট্রো মেকার্সের অন্য কেউ এ পেমেন্ট দেননি। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর আমিও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষী হিসাবে জবানবন্দি দেই।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষীর সংখ্যা ৩৬ জন হলেও দুদক ২৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করবে। মামলা প্রমাণের জন্য ৩৬ জন সাক্ষীকেই আদালতে উপস্থিত করার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এমআই/এএসআর
** খালেদার দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১২ নভেম্বর