লালমনিরহাট: বিলুপ্ত ছিটমহল থেকে ভারতে যেতে ইচ্ছুক (ভারতীয় নাগরিক) ব্যক্তিদের প্রথম দল বাংলাদেশ ত্যাগ করছে সোমবার। বিলুপ্ত ছিটমহল জুড়ে তাই বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর।
পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন ভারত যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা। দূর-দূরান্ত থেকেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিলুপ্ত উত্তর গোতামারী ছিটমহলে ভারত যেতে ইচ্ছুক রতনের স্ত্রী ছবিতা রানীকে বিদায় জানাতে পাটগ্রাম থেকে এসেছেন একমাত্র ভাই কামিনী কান্ত রায়।
ছবিতা রানী বাংলানিউজকে জানান, স্বামী-সন্তানের মুখ পানে চেয়ে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা-মাকে ছেড়ে ভারত যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। মরে গেলেও হয়তো আর দেখা হবে না বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে। এটাই হয়তো হবে শেষ দেখা। শেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
এমনিভাবে ভারত যেতে ইচ্ছুকদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে বিদায়ের আয়োজন। চলছে আপ্যায়ন।
বড়দের মতো পরিবারের ছোটরাও তাদের সহপাঠীদের গলা জড়িয়ে একে অপরকে বিদায় জানাচ্ছেন। এভাবেই বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে লালমনিরহাটের ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে।
নিজের বসত বাড়ির স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখতে মূল্যবান জিনিসপত্র সাজগোজ করতে ব্যস্ত কেউ কেউ। কেউ আবার নিজ বাগানের বাঁশ কেটে তৈরি করছেন বিভিন্ন জিনিসপত্র। স্মৃতি হিসেবে ভারতে নিয়ে যাবেন বাঁশের এসব জিনিসপত্র।
কেউ কেউ আধাপাকা আমন ধান কেটে চিড়া-মুড়ি, পিঠা-পুলি তৈরি করছেন সঙ্গে রাখার জন্য। এ ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারত গমন ইচ্ছুকরা।
ইতোমধ্যে জায়গা-জমি, বসত ভিটা, ঘর-বাড়িসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করে পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েছেন ভারত যাওয়ার ট্রাভেল পাশধারীরা। প্রতি শতাংশ সাড়ে ৮হাজার টাকা মূল্যে ১২৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে ভারত যেতে প্রস্তুতি নিয়েছেন উত্তর গোতামারী ছিটের ভৈরব চন্দ্র (৬৫)। বসত ভিটা বিক্রি করলেও স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে ঘরটি সঙ্গে নিবেন তিনি।
ভৈরব চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, যেহেতু যেতে হবে তাই সব কিছু বিক্রি করে পুরোদমে প্রস্তুত তার সাত সদস্যের পরিবার। বাপ-দাদার বসত ভিটা ছেড়ে যেতে কষ্ট হলেও ছেলেদের ইচ্ছা পূরণ করতেই বৃদ্ধ বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারত যেতে রাজি হয়েছেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন কার্যালয় জানায়, লালমনিরহাটের তিনটি উপজেলার সঙ্গে যুক্ত ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩৯টি পরিবারের ১৯৫ জন ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করেছেন। পরিবহনের সুবিধার জন্য ভারত গমনেচ্ছুদের কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম দলটি সোমবার (৯ নভেম্বর) বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে সব ট্রাভেল পাশধারীদের পাঠানো হবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দলটি সোমবার ভারত যাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব পাশধারীদের পাঠানো হবে। তবে যেসব পরিবার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভারত যাবেনা তাদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চলতি বছরের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পায় ভারত বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষ। যার মধ্যে ১১১টি বাংলাদেশের এবং বাকি ৫১টি ভারতের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি এবং নীলফামারীতে রয়েছে ৪টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
এমজেড