ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: বৃষ্টির নূপুর পায়ে আসে বর্ষা। ফোঁটা ফোঁটা শিশিরে সিক্ত হয়ে আসে শীত।

রকমারি ফুলের বাহার নিয়ে হাজির হয় বসন্ত। বসন্তের সঙ্গে যেমন রয়েছে ফুলের সম্পর্ক, বৃষ্টির সঙ্গে বর্ষার; একইভাবে শিশিরের সঙ্গে রয়েছে শীতের গভীর সম্পর্ক। তবে শীতের সঙ্গে আরও একটি বিষয়ে সম্পর্ক রয়েছে। খেজুরের রস। সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, ভূপ্রকৃতিও বদলে যায়, কিন্তু গ্রাম বাংলার এসব সম্পর্ক অনন্তকাল ধরে এভাবেই বহমান।

ব্যাপক পরিসরে না হলেও আজও গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের একটি খেজুরের রস। আর এর পেছনে কাজ করছেন গ্রামাঞ্চলের গাছিরা। কুয়াশা মোড়া প্রভাতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরও রস নামানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এসব গাছিরা।

শুক্রবার (০৬ নভেম্বর) বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের নানা ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে।

সাধারণত একেকটি খেজুর গাছের রসের উপযুক্ত হতে পাঁচ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। রস পাওয়া যায় প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত। তবে গাছির দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে রস কম, না বেশি পাওয়া যাবে।

প্রত্যেক বছর কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস থেকে গাছকে রসের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন গাছিরা। ফাল্গুন মাস (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত চলে রস সংগ্রহ। একবার গাছ কাটার পর এক থেকে তিনদিন পর্যন্ত রস পাওয়া সম্ভব। তবে সব এলাকার গাছিরা প্রথমদিনের রসের আলাদা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কেননা স্বাদ ও গুণে এর মান অনন্য।

আব্দুল মজিদ, আবুল হোসেন, আব্দুল জলিল, খলিলুর রহমান, ফয়েজ উদ্দিনসহ একাধিক গাছি বাংলানিউজকে জানালেন, আগে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু এখন তেমন একটা নেই। এরপরও যা আছে, তা নিয়েই তারা ব্যস্ত। রস নামানোর জন্য এরই মধ্যে গাছ পরিস্কারের কাজ শেষ করে এনেছেন তারা। উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় রস নামানোও শুরু হয়েছে।

খেজুরের রসের ফিরনি, রকমারি পিঠা-পুলি, পায়েশ, পাটালি গুড়, লালী ও দানা গুড় অনেকেরই প্রিয়। রস নামা শুরুর পর থেকেই গ্রামে গ্রামে চলে এসব খাওয়ার ধুম। তবে খেজুর রসের ফিরনির স্বাদ, যিনি একবার পেয়েছেন, তার পক্ষে ভোলা প্রায় অসম্ভব।

গাছিরা আরও জানালেন, খেজুর গাছ ও রসের সঙ্গে গ্রাম বাংলার শৈশব-কৈশোরের বেড়ে উঠার এক গৌরবোজ্জ্বল হারানো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এসব অঞ্চলের এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি খেজুর রসের পিঠা ফিরনির স্বাদ নেননি।
 
শিশির ভেজা সকাল আর শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিতে আজও ছড়িয়ে আছে এই রসের মিষ্টি ঘ্রাণ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, গৌরব আর সংস্কৃতিকে ধরে রাখতেই যেন এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় খেজুর গাছকে। তবে গাছিরা মনে করেন, এখনই নতুন করে গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যেদিন খেজুরের রস ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এমবিএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।