খুলনার আদালতপাড়া থেকে: ‘কী রায় অয়(হয়) তা দ্যাহার (দেখার) লাইগে (জন্য) এতোদিন বইয়ে (বসে) ছিলাম। নামাজ পইড়ে (পড়ে) আল্লার কাছে দোয়া করছি, আমার বুক যারা খালি করছে, তাদের যেন ফাঁসি অয়।
পৈশাচিক কায়দায় খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ে তিন আসামির দু’জনের ফাঁসি হলেও একজনের খালাসের রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন রাকিবের মা লাকি বেগম।
এদিকে রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে আদালতের সামনের সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন রাকিবের পরিবারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
লাকি বেগম বলেন, বিউটি বেগমের কথা মতো শরীফ ও মিন্টু আমার ছেলেরে মারছে। হেই বিউটি খালাস পাওয়ায় এ রায় আমরা মানি না।
এসব কথা বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন রাকিবের মা।
রোববার (০৮ নভেম্বর) খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক (অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) দিলরুবা সুলতানা বহুল আলোচিত রাকিব হত্যা মামলায় আসামি গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খানকে ফাঁসি এবং শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। ওর খুনিদের শাস্তি হওয়ায় আমি খুব খুশি। তবে তিনজনেরই ফাঁসি হলে পুরোপুরি খুশি হতে পারতাম। তারপরও এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হলেআমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে’।
তিনি আরও বলেন, আমার দু’টি ছেলে-মেয়ে ছিল। ওরা ছিল আমার সংসারের প্রদীপ। আমার একটি প্রদীপ অকালে নিভে গেছে। বেঁচে থাকা একটি প্রদীপ আর রাকিবের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। যখন ঘুমাতে যাই, তখনই ওর কথা মনে পড়ে। ছেলের শোকে এখনো ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। আমি বলতে চাই, আর কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়’।
গত ০৩ আগস্ট বিকেলে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়স্থ শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ সহযোগী মিন্টু খানকে নিয়ে যানবাহনে হাওয়া দেওয়া কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে শিশু রাকিবের পায়ূপথে হাওয়া ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করেন।
০৪ আগস্ট রাকিবের বাবা মোঃ নুরুল আলম বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২৫ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
গত ০৬ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আদালত বিচার কাজ শুরুর জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা ০১ অক্টোবর দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়।
গত ০৫ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। ১১ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে মামলার ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৮ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বক্তব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
গত ০১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর ০৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক।
ঘটনার মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় ও ১১ বিচারিক কার্যদিবসে এ রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
এমআরএম