ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ফাঁসির রায় শুনে মুখ কালো শরীফ-মিন্টুর

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
ফাঁসির রায় শুনে মুখ কালো শরীফ-মিন্টুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) দিলরুবা সুলতানা আলোচিত শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায় পড়ে শোনালেন।



রায়ে মোটর গ্যারেজ মালিক শরীফ এবং তার সহযোগী মো. মিন্টু খানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তবে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামি শরীফের মা বিউটি বেগমকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

রায় শোনার পর ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিরা বিচলিত হয়ে কাঁদেননি। তাদের মনোবল ভেঙেছে বলেও মনে হয়নি। যে কারণে অনেকে বলছেন, খুনিরা  পাষাণ হৃদয়ের তা আবারও প্রমাণিত হলো।

রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শরীফ ও মিন্টু খানের মাথা নিচু হয়ে যায়। তাদের মুখমণ্ডলও কালো হয়ে যায়। তবে
তাদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়নি।

অন্যদিকে শরীফের মা নিজে খালাস পেলেও ছেলের মৃত্যুদণ্ডেের আদেশের কারণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

রায়ে সন্তোষ ও উল্লাস প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, এ রায় নতুন কোন অপরাধ সংঘটিত না হওয়ার  ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ রায়কে আবেগতাড়িত বলে মন্তব্য করে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি কাজী আবু শাহিন বলেন, খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় রায় ঘোষণা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। এ রায় নতুন কোনো অপরাধ সংঘটিত না হওয়ার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করবে।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার এ রায়কে আবেগতাড়িত বলে মন্তব্য করে বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুযায়ী সকল আসামির খালাস পাওয়ার কথা। কিন্তু আদালত সে অনুযায়ী রায় দেননি। ন্যায়বিচারের জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে যাবেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, খুলনা ইউনিটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৩ মাস ৫ দিন অর্থাৎ ৯৭ দিনে রায় ঘোষণা হয়েছে। তবে আদালতের বিচারিক কার্যদিবস ছিল মাত্র ১১টি। এতো স্বল্প সময়ে মামলার রায় ঘোষণা বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।

জনাকীর্ণ আদালতে দেওয়া রায়ে বিচারক দিলরুবা সুলতানা উল্লেখ করেন, ৩০২ ধারা অনুযায়ী আসামি শরীফ ও মিন্টু খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো। অন্যদিকে শরীফের মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।

একই সঙ্গে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আগামী সাতদিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন বিচারক।

রোববার (০৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন আদালত। এর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ১২টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ করেন।

রায় শোনার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের বাইরে থাকা বাদীপক্ষ ও উৎসুক জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিশেষ করে নিহত রাকিবের বাবা-মা ও বোনসহ আত্মীয়-স্বজনরা আসামিদের দ্রুত ফাঁসির দাবি জানিয়ে আদালতের সামনের সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

রাকিবের বাবা মো. নূরুল আলম ও মা লাকি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, শরীফের মা বিউটি বেগম খালাস পাওয়ায় তারা খুশি হতে পারেননি। তাদের প্রত্যাশা ছিলো তিনজনেরই ফাঁসির রায় হবে।

গত ০৩ আগস্ট বিকেলে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়স্থ শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ সহযোগী মিন্টু খানকে নিয়ে যানবাহনে হাওয়া দেওয়া কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে শিশু রাকিবের পায়ূপথে হাওয়া ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করেন।

০৪ আগস্ট রাকিবের বাবা মোঃ নুরুল আলম বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২৫ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

গত ০৬ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আদালত বিচার কাজ শুরুর জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা ০১ অক্টোবর দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়।

গত ০৫ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। ১১ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে মামলার ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৮ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বক্তব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

গত ০১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর ০৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক।

ঘটনার মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় ও ১১ বিচারিক কার্যদিবসে এ রায় ঘোষণা করলেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর

** রায়ে অসন্তুষ্ট রাকিবের মা–বাবা, চলছে সড়ক অবরোধ
** রাকিব হত্যায় শরীফ-মিন্টুর ফাঁসি, বিউটি খালাস
** আসামিরা আদালতে, কিছুক্ষণের মধ্যে রায়
** ১১ কার্যদিবসে রায় ঘোষণা ইতিহাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।