ঢাকা: ‘যাবে না মানে, ওর বাপ যাবে। বলেন- না গেলে থানায় জিডি করব।
সিএনজি অটোরিকশাচালক মিটারে যেতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ কন্ট্রোল রুমে (পুকরু) জানালে সেখান থেকে এল এই উত্তর। কিন্তু সিএনজি চালককে পুলিশের কথা বলতেই তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, ‘পুলিশরে আপনে ফোন দ্যান, দেহি কি অয়। ’
শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুল ইসলাম। কিন্তু কোন সিএনজি অটোরিকশাচালককেই মিটারে যেতে রাজি
করাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পুকরু’র নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এই উত্তর আসে বলে জানান আনিসুল।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া। অতিরিক্ত কিন্তু ভাড়া তুলনামূলক বেশি হলেও সে ভাড়াতেও মিটারে যাচ্ছে না অধিকাংশ অটোরিকশা চালক। আবার এ বিষয়ে অটোরিকশার গায়ে লেখা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের (পুকরু) নম্বরে যোগাযোগ করেও সন্তোষজনক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
শুধু আনিসুলই নন, আরো অনেক যাত্রীরই রয়েছে এমন অভিযোগ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফররুখ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায়। তিনি মতিঝিল যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছেন। কিন্তু কোন সিএনজি চালককেই মিটারে যেতে রাজী করাতে পারছেন না। কেউ কেউ যেতে রাজী হলেও তারা মিটারের ভাড়ার চেয়ে ৫০-৬০ টাকা অতিরিক্ত দাবি করছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার গায়ে পুকরু’র একাধিক নাম্বার লেখা রয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া মুশকিল। তারা দায়সারা কথা বলে ফোন রেখে দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী, ফার্মগেট, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি কিছু চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অল্প দূরত্বের গন্তব্যে রাজি হচ্ছে না, কেউবা আবার গেলেও বিভিন্ন পথ ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
নুহাশ নামে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আজিমপুর থেকে ধানমন্ডি ৩২ যাওয়ার জন্য কয়েকজন সিএনজি চালককে বললেও কেউ রাজি হয়নি। একজন যাবে, ভাড়া চায় দুইশ’ টাকা।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে পুকরু’তে ফোন দেয়া হলে অভিযোগের সত্যতা মেলে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বলেন, ভাড়া একটা ঠিক করে উঠে যান, নামার সময় মিটারে যা আসে দিয়ে নেমে যাবেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করা হলে বলেন, পুলিশের টিম কাজ করছে। প্রতিদিনই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মভঙ্গকারী চালকদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
তবে এই পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মালিকরা মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন থেকে এখনও দু’বেলা আট/সাড়ে আটশ’ টাকা করে মোট ১৬-১৭শ’ টাকা জমা আদায় করছে। বেশিরভাগ দিনই দেখা যায়, মালিকের জমা উঠে আসে না। কিন্তু পুলিশ, বিআরটিএ কেউই মালিকদের কিছু বলছে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সবগুলো নম্বরই সচল রয়েছে। এ নম্বরগুলোতে ফোন করে দুর্ঘটনা, ছিনতাই বা যে কোন ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে এসব অভিযোগ মোকাবিলা করা হয়।
তবে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরলে তিনি বলেন, এটা খতিয়ে দেখা হবে ওই সময় কারা ছিল। এসব অভিযোগ সত্য হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সিএনজিচালিক অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া চল্লিশ টাকা, যা আগে ছিল পঁচিশ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে। আর যানজটে বা অন্য কোন কারণে প্রতি মিনিট বিরতির জন্য দিতে হবে দুই টাকা, যা আগে ছিল এক টাকা ৪০ পয়সা। ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি মালিকদের জমার পরিমাণও ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এইচআর/জেডএম