ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামীর মুণ্ডু কেটে গর্তে পুতে রাখলেন স্ত্রী !

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
স্বামীর মুণ্ডু কেটে গর্তে পুতে রাখলেন স্ত্রী ! আলী হোসেন ও পারভীন আক্তার

সিলেট: প্রথমে স্বামীর দেহ দু’খণ্ড করলেন। এরপর মুণ্ডু পুতে রাখলেন বাড়ির পাশে একটি টিলার গর্তে।

আর মুণ্ডুবিহীন দেহ ফেলে আসলেন জঙ্গলে। ‘নির্যাতন’ সইতে না পেরে এমন রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটালেন পারভীন আক্তার (৩৬)

এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সিলেটের শাহপরান থানার পীরেরবাজার শাহসুন্দর মাজার সংলগ্ন মোকামেরগুল এলাকায়। পারভীনের হতভাগ্য স্বামীর নাম আলী হোসেন (২৬)।

সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে পারভীনকে আটক করে সিলেট মহানগরীর শাহপরান (র.) থানা পুলিশ। এরপর পারভীনেরই দেওয়া তথ্য অনুসারে আলীর খণ্ডিত দেহ উদ্ধার কর‍া হয়।

চার সন্তানের জনক আলী হোসেন মোকামেরগুলে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীর শিরশ্ছেদ করার পর মরদেহ গুমের কথা স্বীকার করেন পারভীন।

সিলেট সদর উপজেলার শাহপরান থানার দাশপাড়া এলাকার সুরুজ আলীর মেয়ে পারভীন আক্তার তিন বছর আগে পাথর ব্যবসায়ী আলী হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি আলীর তৃতীয় স্ত্রী। আলীর অন্য দুই স্ত্রী জাফলংয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য তার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন বেগম দাবি করেন, তার স্বামী আলী হোসেন তিন বিয়ে করেছেন। স্বামী প্রায় সময় তাকে নির্যাতন করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাসখানেক ধরে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। প্রতিদিন রাম দা শান দিয়ে রাখেন। কিন্তু হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

তবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন গত ৪ নভেম্বর (বুধবার) ভোররাতে। ঘুমন্ত অবস্থায় দুই কোপে স্বামীর মুণ্ডু বিচ্ছিন্ন করেন পারভীন। বিচ্ছিন্ন মুণ্ডুটি পার্শ্ববর্তী একটি টিলার গর্তে পুতে রাখেন। আর মরদেহ প্রথমে ঘরের মেঝেতে গর্তে পুতে রাখেন। এরপর ৫ নভেম্বর রাতে মরদেহ রশি দিয়ে টেনে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে রাখেন।

পারভীন জানান, হত্যাকাণ্ডের রাতে তার বাবা (আলীর শ্বশুর) সুরুজ আলী বাসায় অবস্থান করলেও তাকে বেশ ক’টি ঘুমের বড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন তিনি। এ ঘটনায় সুরুজ আলীকে আটক করলেও সোমবার রাতে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মাথায় সোমবার মোকামেরগুল বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে আলী হোসেনের মুণ্ডুবিহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। পারভীনকে আটককালে ঘর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি রাম দা উদ্ধার করে পুলিশ।

আলীর ছোট ভাই জমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৪ নভেম্বর থেকে ভাইয়ের খোঁজ পাইনি। অজ্ঞাত নাম্বার থেকে এক লোক মোবাইল ফোনে ভাইয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়। যে কারণে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরি (নং-৪২৭) করি আমরা।
 
তিনি বলেন, ৩ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে আলী হোসেন মেঝো। তার প্রথম স্ত্রীর ঔরসজাত তিন সন্তান এবং তৃতীয় স্ত্রীর এক সন্তান রয়েছে। তবে মেঝো স্ত্রীর সঙ্গে বাল্যকালে বিয়ে হলেও পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
 
আলীর ভগ্নিপতি তোতা মিয়া ও বন্ধু হেলাল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, পারভীন একাই তার স্বামীকে হত্যা করেছেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি পুলিশকে খতিয়ে দেখতে হবে।

এদিকে, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর রাত ১০টার দিকে শাহপরান থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফজলে মাসুদ উদ্ধারকৃত খণ্ডিত মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠান।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রোববার (৮ নভেম্বর) বিকেলে নিহতের স্বজনরা জাফলং থেকে এসে শাহপরান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে পারভীন বেগমকে আটক করা হয়। আটকের পর পুলিশের কাছে স্বামী হত্যার বর্ণনা দেন তিনি।
 
তার দেওয়া তথ্য মতে, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী টিলা থেকে খণ্ডিত মুণ্ডু ও জঙ্গলে ফেলা মুণ্ডুবিহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় মরদেহের শরীর থেকে মাংস ঝরে পড়ছিল।
 
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুছা বাংলানিউজকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন বেগম স্বামীকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীকে হত্যা করেছন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জমির হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলে জেনেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এনইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।